চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে আহত হওয়া সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য এস এম ফজলুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আজকে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই উপউপাচার্য, সব ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি জরুরি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এই মিটিংয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব সিন্ধান্ত নেওয়ার হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো
১. সংঘর্ষে আহত সব শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় প্রশাসন বহন করবে, এ জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
২. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় একটি মডেল থানা স্থাপনের বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করবে প্রশাসন।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় রেলক্রসিং এলাকায় একটি পুলিশ বক্স স্থাপনের ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
৪. আজকের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবে প্রশাসন।
৫. সংঘর্ষের ঘটনা পর্যালোচনার জন্য আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) একটি জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছে।
৬. জোবরা এলাকার বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য একটি কমিটি করা হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রত্যাহার না করার অনুরোধ করেছে প্রশাসন।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য একটি হটলাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত।
এর আগে, শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রোববার বেলা ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, রোববার থেকে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এরমধ্যে ৫০০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন।
আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশরই শরীর ছিলে গেছে, কেটে গেছে এবং তাদের শরীরে গভীর ক্ষতও ছিল। স্ক্রিনের নিচে ব্লাড জমে কালো হয়ে গেছে, এ ধরনের শিক্ষার্থীও ছিল। মোটকথা, ছোট-বড় সব ধরনের ক্ষতই ছিল। শিক্ষার্থীদের কপাল, মাথা, শরীরে ক্ষত ছিল।
জানা যায়, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ।
দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে ২ নম্বর গেট-সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে।
সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে। একপর্যায়ে গতকাল বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তিন শিক্ষার্থী নগরের দুই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
এসএন