অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সিলেটের পাথর মহল এলাকাগুলো থেকে আরও আগে থেকে পাথর উত্তোলন করছিল এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে ৫ আগস্ট-এর কাঁধে বন্দুক রেখে বলা হচ্ছে ৫ আগস্টের পরে নাকি এসব হয়েছে। আসলে নির্বিঘ্নে আগে থেকেই সিলেটের পাথর মহল এলাকাগুলো থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজনৈতিক সিরডাপ মিলনায়তনে ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা শীর্ষক নগর সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের ছয়টি জায়গা থেকে নির্বিঘ্নে পাথর উত্তোলন হচ্ছিল। আমি এ বিষয়ে প্রথম মামলা করি ২০০৯ সালে। এর আগেই অন্তত দুই বছর ধরে উত্তোলন চলছিল। পরে দীর্ঘ মামলার লড়াই ও অ্যাডভোকেসির পর ২০২০ সালে জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। সরকার তখন উদ্যোগ নেওয়ায় বাকি ছয় জায়গায়ও কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু লুটপাট আবার শুরু করার জন্য পাল্টা প্রচেষ্টা চলতে থাকে।
তিনি বলেন, এখন বলা হচ্ছে, কয়েক দিনে ৩০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। অথচ ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৪০ কোটি টাকা। “তাহলে প্রকৃত মূল্য ও রাজস্বের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই। লুটেরাদের আসলে আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি, রযোগ করেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান জানান, দেশের মোট পাথরের চাহিদার মাত্র ৬ শতাংশ আসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, বাকিটা আমদানি করা হয়। “তাহলে কেন এই ছয়টি জায়গা সংরক্ষণ করা গেল না? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যানের অভাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে পর্যটন উন্নয়ন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে জাফলংসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখনো সংরক্ষিত হয়নি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সর্বদলীয় ঐক্যর কথা আমিই বলেছিলাম। এজন্যই রাজনৈতিক ঐক্যও গুরুত্বপূর্ণ । রাজনৈতিক সমর্থন যদি না থাকে তাহলে প্রশাসন সাহায্য করবে না। প্রশাসন সাহায্য না করলে পাথর তোলা বন্ধ করা সম্ভব নয় । পাথর তোলা অবৈধভাবে বন্ধ করতে কাজ করবে প্রশাসন। কিন্তু জলাশয় সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ধারের ক্ষেত্রে সেটা বারবারই প্রশাসনের অনুপস্থিতির আমরা দেখেছি। জনগণ যখন এটার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করলে তখনই সিলেটের পাথর তোলা আমরা বন্ধ করতে সফল হয়েছি।
উপদেষ্টা রিজওয়ান হসান আরো বলেন, পাথর কিন্তু আমার মন্ত্রণালয় না। তারপরও আমি সিলেটের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গিয়েছি এবং এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট উপদেশটাকে অনুরোধ করেছি এবং তিনিও এই বিষয়ের ব্যবস্থা নিয়েছেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঠিক যেভাবে আমরা সাদা পাথর নিয়ে কথা বলি ঠিক একইভাবে বাকখালি নদীর দূষণ নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। কার দশতলা ভবন ভাঙতে বাধা দেওয়া জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হলো। কার চার তলা ভবন বাকখালি নদীতে থাকাতে সেটি যেন না ভাঙ্গা হয় তার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হলো। বাকখালী নদীতে উচ্ছেদের পরিকল্পনা ছিল পাঁচ দিনের। প্রচণ্ড বিরোধিতা বাধার মুখে ৩ দিন করা গেছে। দুই দিন উচ্ছেদ করা যাইনি। উচ্ছেদ হবে, বাকখালী নদীকে অবশ্যই দখলমুক্ত করব। সেজন্য আমরা রাজনৈতিক সমর্থন যেন পাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল তারপরেও বাধা কোথা থেকে আসলো। কেন বাধা দেওয়া হলো, বাকখালী নদী গত চার বছরে কোন রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় দখল করা হয়েছিল ।
এমকে/টিএ