২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের অফিসিয়াল গান ‘ওয়াকা ওয়াকা (দিস টাইম ফর আফ্রিকা)’-শাকিরা ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যান্ড ফ্রেশলি গ্রাউন্ডের যৌথ পরিবেশনা-বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তকে এক করেছে গানটি, আর এর মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বিপুল অর্থ। হিসাব অনুযায়ী রয়্যালটি আয় ছিল অন্তত সাত মিলিয়ন পাউন্ড। প্রতিশ্রুতি ছিল, এই অর্থ যাবে চ্যারিটি খাতে, বিশেষ করে আফ্রিকার শিশু-কিশোরদের জন্য ফুটবলভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পে।
কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, সেই টাকার সঠিক গন্তব্য আজও অজানা। ফ্রেশলি গ্রাউন্ড খোলাখুলি অভিযোগ তুলেছে-তাদের জানানো হয়নি রয়্যালটির অর্থ কোথায় খরচ হয়েছে। অন্যদিকে সনি মিউজিক বলছে, তারা পুরো অর্থ ফিফার কাছে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু ফিফা যা বলছে, তা আংশিক এবং ধোঁয়াশাপূর্ণ। তারা দাবি করছে, ‘২০ সেন্টারস ফর ২০১০’ নামে এক প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে টাকা, কিন্তু প্রকল্পটি ২০১৪ সালের পর আর সক্রিয় ছিল না। তবু ফিফা দাবি করছে, লিগেসি প্রকল্প চলমান।
প্রশ্ন উঠছে-যদি প্রকল্প বন্ধ থাকে, তবে কোটি কোটি টাকার সেই আয় গেল কোথায়? প্রকৃতপক্ষে কি সব অর্থই চ্যারিটিতে খরচ হয়েছে? নাকি এর একটি অংশ অন্য খাতে গিয়েছে? এই অস্বচ্ছতা কেবল ফিফার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বিশ্বব্যাপী সংগীত ও ক্রীড়া উভয় অঙ্গনেই এক ধরনের অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বাংলাদেশের পাঠকের কাছে বিষয়টি নতুন নয়। আমাদের সমাজেও বড় বড় ইভেন্ট বা উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব, টাকার সঠিক হিসাব না মেলার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। তাই ফিফার মতো বৈশ্বিক সংস্থার ক্ষেত্রে একই প্রশ্ন দেখা দেওয়া শুধু বিস্ময়কর নয়, বরং বিশ্বব্যাপী জবাবদিহি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
‘ওয়াকা ওয়াকা’ শুধু একটি গান ছিল না-এটি ছিল আফ্রিকার ঐক্য, গৌরব ও সংগ্রামের প্রতীক। সেই প্রতীকের সাথে যুক্ত অর্থ যদি অস্পষ্ট হিসাবের জালে আটকে যায়, তবে তা কেবল শিল্পীদের নয়, বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের কাছেই একপ্রকার প্রতারণা।
টিকে/