নির্বাচন কমিশনের অধীন কর্মকর্তারা হতে পারবেন সচিব। সেই সঙ্গে ইসিতে প্রেষণে নিয়োগও বন্ধ হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০০৯ সালের আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। রাষ্ট্রপতির সই হলে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।
বিদ্যমান আইনে রয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিযুক্ত একজন সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রেষণে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা নিয়োগ করা যেত এবং ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সচিব হিসেবে পদোন্নতির তেমন সুযোগ ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ইসির স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ও কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিসের সুপারিশ করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনও বিদ্যমান আইনের সংশোধন চেয়ে সরকারের কাছে একই প্রস্তাব রাখে। এ সার্ভিস চালু হলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা পদোন্নতির মাধ্যমে সচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশে (ধারা ৩ এর উপধারা (৪) প্রতিস্থাপিত হবে) বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস থাকবে। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ কাজটি নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের দায়িত্ব হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সার্ভিস থাকার সুপারিশ বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ সায় দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। নির্বাচন কমিশন সার্ভিস করার বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছিলাম, নির্বাচন কমিশনও তাতে সম্মতি দিয়েছে। এখন সরকার সংশোধন অধ্যাদেশ অনুমোদন দিল। এ সার্ভিস ব্যবস্থা থাকলে স্বাধীন ইসি সচিবালয়ের পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় কমিশনের পরিপূর্ণ এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা পাবে।
তিনি আরও বলেন, ইসি সচিবালয়ে এখন প্রেষণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়; অতীতে তাদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণও দেখা গেছে। এখন নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব করা যাবে। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেদের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ পূর্ণভাবে করবে ইসি। জবাবদিহিতা নিশ্চিত যেমন হবে, তেমনি কোনো ধরনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতার ঘাটতি হলে কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না।
ইসি সচিবালয়ে সহকারী সচিব থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের যোগ্যতা বিবেচনায় সার্ভিসের মাধ্যমে আগামীতে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পূর্ণতা পাবে বলে জানান এ বিশ্লেষক। বর্তমানে ইসি সচিবালয়ের কেন্দ্রীয়, দশ আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, ৬৪ জেলা ও পাঁচ শতাধিক উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। এটা খুবই ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের দাবি পূরণের পথ প্রশস্ত হলো।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ সাংবিধানিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে কমিশনের প্রশাসনিক কাঠামোরও স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এজন্য সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সার্ভিসের পক্ষে। এ সংশোধন অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সার্ভিস সংক্রান্ত বিধি প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে।
কেএন/টিকে