সৃষ্টি থেকেই জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এমনকি তারা আগামীতেও জনবিচ্ছিন্ন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। সম্প্রতি একটি টক শোতে হাজির হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতের বিতর্কিত ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সৃষ্টি থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
৪৭-এ তারা পাকিস্তান সৃষ্টির বিপক্ষে ছিল। অভিন্ন ভারতের পক্ষে ছিল। পাকিস্তানের স্বাধীন মুসলিম আলাদা জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীন দেশ তৈরির পক্ষে ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময় বিশেষ করে আমি বলব যে শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগ সত্তরের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর পাকিস্তানিরা তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করল না।
একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের নিরীহ নিরপরাধ বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালাল এবং সে সময় জাতি প্রস্তুতও ছিল না। সে অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ শুরু হলো। মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই পর্যন্ত গেলে চোরাগোপ্তা হামলা, গেরিলা হামলা কিছু কিছু হলো।
সেই সময় জামায়াতে ইসলামী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তানের সহযোগীদের দায়িত্ব পালন করেছে। তারা গণহত্যা চালিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার হত্যা করেছে। বাড়িঘর লুটপাট করেছে। আগুন লাগিয়েছে। এটা সত্য।’
মুক্তিযুদ্ধের পর রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েও একের পর এক ভোলবদল করেছে জামায়াত, এমনটা উল্লেখ করে হারুনুর রশিদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ ছিল। শেখ মুজিব সপরিবারে মারা যাওয়ার পর জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এলেন। ক্ষমতায় আসার পর তাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং সেখানে তিনি আসার পর সব রাজনৈতিক দল উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যেমন নতুন নিবন্ধন পেয়েছে, জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধন পেয়েছে। রাজনীতির একটা মাঠ হয়েছে। ’৮৬ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা সব দল একমত। শেখ হাসিনা চিটাগং গিয়ে বলল যে যারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান।
জামায়াত বলল, যারাই এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় মুনাফিক। আর বিএনপি মূলত নির্বাচনে যাবেই না। সেখানে পরের দিন এরশাদের অধীনে জামায়াত এবং শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল। তারপর আপনি দেখেন ’৯০ সালে তো আমরা আন্দোলন করলাম আবার একসাথে। যুগপৎ আন্দোলন করে এরশাদকে বিদায় করলাম। তারপর বিএনপি ক্ষমতায় এলো। তিন বছর গেল না আবার ওই এরশাদ, হাসিনা এবং জামায়াত একসাথে আন্দোলন করল। এই মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধক সরকার। ১৭২ দিন হরতাল করেছে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের শেষ নাই।’
জামায়াত সামনেও জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে দাবি করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে জামায়াতে ইসলামী বলে যে আল কোরআনের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো। তাদের মূল স্লোগান তো এটাই। পিআর পদ্ধতি দিয়ে দেশে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে? আপনি আলোচনার টেবিলে আছেন, জুলাই সনদ নিয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে, চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচির ব্যাপারে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং আমি বলব, এটা ইতিবাচক। আগামীতে জাতীয় একটা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যদি আপনি এখনই এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন, তাহলে জনগণের কাছ থেকে কিন্তু তারা বিচ্ছিন্ন হবেন।’
জামায়াতের আন্দোলন বিএনপিকে চাপে ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কি ক্ষমতায় আছি? কী জন্য বিএনপির দিকে আসবে! এটা আমাদের চাপে ফেলার কোনো বিষয় না।’
কেএন/টিএ