রাজনৈতিক কাঠামোতে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বে‌শি হয়রানির শিকার হন : জোরিস ভ্যান বোমেল

রাজনৈতিক কাঠামোতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হয়রানির শিকার হন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক রাজনীতি : নারী ও তরুণ নেতৃত্বের অভিযাত্রা’—শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে এই মন্তব্য ক‌রেন রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্তর্ভুক্তি এবং সংলাপ—এ দুটি শব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, সামনে এগিয়ে যেতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া অপরিহার্য। তবে এখানে বিষয়টি তরুণদের নিয়ে। তরুণদের কর্মসংস্থান বলতে আমরা কী বুঝি? কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যার কারণে তরুণরা আমাদের প্রত্যাশা মতো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত বা সম্পৃক্ত হচ্ছে না?

তি‌নি ব‌লেন, নারীদের অন্তর্ভুক্তির কথা বলতে গেলে দেখা যায়, রাজনৈতিক কাঠামোতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হয়রানির শিকার হন। সেক্ষেত্রে আমরা কোন কোন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারি? একইভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রশ্ন ওঠে। তাই অন্তর্ভুক্তি আমার মতে প্রথম কীওয়ার্ড এবং দ্বিতীয়টি হলো সংলাপ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার ব‌লেন, আমি অনেক তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছি ও করছি। ঐকমত্য কমিশনে নারীদের কথা আমি বলেছি। বিভিন্ন কারণে নারীরা প্রতিনিধিত্ব অবস্থানে আসতে পারে না। নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার সন্তানও পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। সমাজেও এর প্রতিফলন থাকবে।

তি‌নি ব‌লেন, নারীরা আমাদের বোঝা নয়। আমাদের তাদের ওপর বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা নারীর আসন সংখ্যা বাড়াতে চাই। ১০০ আসন নারীদের জন্য হবে এবং এটি রোটেশন পদ্ধতিতে হবে। আমি মনে করি, রোটেশনাল সিস্টেমটা হলো ভালো পদ্ধতি।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস-এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। তি‌নি ব‌লেন, আন্দোলনের সময় যে নারী ও তরুণরা মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন তার মধ্যে কিছু তরুণ সামনে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বা মেয়েরা যারা পুলিশের ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়েছিল এই পরিবর্তন তাদের শেষ পর্যন্ত হতাশ করেছেন বলে আমার মনে হয়। বাংলাদেশের মূল শক্তি তরুণরা, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আছে। পরিবর্তনের এক বছর হয়েছে কিন্তু ফলাফল আশাব্যাঞ্জক নয়। 

জিল্লুর রহমান ব‌লেন, রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ কম, আমাদের সহনশীলতা খুব কমে গেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা নারী ও তরুণদের দেখা যায় না। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রগঠনের ঘোষণাপত্র আপনাদের দিয়েছি। কিন্তু এই ঘোষণার স্বার্থকতা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলের ওপর।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ব‌লেন, নারীরা অবশ্যই পিছিয়ে আছে। ৩০০ জন সিটের মধ্যে নারী ও তরুণদের সরাসরি ভোটে যায় খুব কম। ৩০০ সিট সরাসরি ভোট হবে। ১০০ সিট বা পরে ১০০ সিট ভোট হবে নারী। কিন্তু ভোটার হবে নারী-পুরুষ। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার দুইজন হলে একজন নারী হবে। নারীদের শিক্ষা দিতে হবে, তাহলে তারা এগিয়ে থাকবে। 

তি‌নি ব‌লেন, বিপ্লবের পরপর তরুণরা চলে গিয়েছিল রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন আমার নিয়োগকর্তা, আমার ডিজাইনার- এটি বলার ফলে রাষ্ট্রের সমস্ত দায় দায়িত্ব গুটিকয়েক তরুণদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আনুষঙ্গিক হয়েছে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দায়। তরুণরা কি কখনো এই ব্যর্থতার দায় নেওয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিল অথবা তারা কেন এই ব্যর্থতার দায় নেবে?

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ব‌লেন, আমাদের দেশে যত আন্দোলন হয়েছে সব জায়গায় নারী ও তরুণরা ছিল। ১০০ জন নারীর সরাসরি ভোটে থাকা উচিত। নারীরা আমদের সংসার চালাচ্ছে। তাহলে তারা কেন রাষ্ট্রীয় কাজে থাকতে পারবে না? আমরা নারীদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করি না। মানুষ হিসেবে নারীদের আমরা সম্মান দিতে পারি না। ঐকমত্য কমিশনকে বলা হচ্ছে পুরুষ ক্লাব। এরা নারীদের নিয়ে আলোচনা করছে। এতে সচেতন নারীরা নাখোশ হয়েছে। 

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন ব‌লেন, এই সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে নাই। নারীরা যদি জুলাই আন্দোলনে না নামত তাহলে এই আন্দোলন সফল হত না। কিন্তু আন্দোলনের পর নারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ঐকমত্য কমিশনে নারী প্রতিনিধি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোতে তরুণদের নেওয়া হয় না। আন্দোলন করবে তরুণরা কিন্তু ফল ভোগ করবে রাজনৈতিক দলরা।  

এবি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

যেভাবে হালাল-হারাম বেছে চলবেন Sep 25, 2025
চীনের রণতরীতে নতুন প্রযুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের চাঞ্চল্য! Sep 25, 2025
শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সেবা নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছে ডাকসু! Sep 25, 2025
এবার ভারত উত্তাল জেন জি আন্দোলনে, প্রাণহানি অন্তত ৪ Sep 25, 2025
এবার ভারত উত্তাল জেন জি আন্দোলনে, প্রাণহানি অন্তত ৪ Sep 25, 2025
বিমানবন্দর থেকে আলাদা বের হওয়ার কারণ জানালেন ড. তাহের Sep 25, 2025
img
অশান্তির আগুন নেভাতে হাতপাখার বাতাস লাগবে : চরমোনাই পীর Sep 25, 2025
img
গাজায় ‘কিছু একটা চুক্তির’ কাছাকাছি আছি: ট্রাম্প Sep 25, 2025
img
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা বিএনপির প্রতিশোধ : আমান উল্লাহ Sep 25, 2025
img
ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলা প্রত্যাহার ফ্রান্সের Sep 25, 2025
img
৮ বিশেষ ট্রেন চলবে দুর্গাপূজায়, বাতিল সাপ্তাহিক ছুটি Sep 25, 2025
img
জাতিসংঘে শতাধিক প্রতিনিধি পাঠিয়ে হতাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার : টিআইবি Sep 25, 2025
img
বাংলাদেশকে ১৩৬ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান Sep 25, 2025
img
স্বাস্থ্যসেবা অর্থ উপার্জনকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় : প্রধান উপদেষ্টা Sep 25, 2025
img
ড. ইউনূস নোবেল পেলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় আণ্ডা পেয়েছেন : ফয়জুল করিম Sep 25, 2025
img
বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে : প্রধান উপদেষ্টা Sep 25, 2025
img
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে আখতারের মামলা, বিচার কি পাবে? Sep 25, 2025
img
যুব বেকারত্ব বিশ্বে সবচেয়ে বড় সংকট: জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা Sep 25, 2025
img
গাজীপুরে ঝুটের গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট Sep 25, 2025
img
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট সারকোজিকে ৫ বছরের কারাদণ্ড Sep 25, 2025