সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগপন্থী কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার খবর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। মামলাটি করেছেন এনসিপির নেতা আখতার হোসেন। তিনি অভিযোগ করছেন যুক্তরাষ্ট্রে হোটেলের লবিতে, এমনকি বিমানবন্দরেও তার ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকেই এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিবাদের অংশ বলে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি পরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক প্রচেষ্টা।
আখতার হোসেনের এই মামলা কি শুধুই প্রতীকী প্রতিবাদ, নাকি আদৌ কোনো বিচারিক পরিণতি পাবে? বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’-তে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আখতার হোসেন মামলা করেছেন। খবরটি দেখে মনে হতে পারে, তিনি দারুণ কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু বিষয়টা আসলে এতটা সোজা না।
এই ধরনের মামলা করতে হলে তাকে দীর্ঘ সময় ধরে আমেরিকায় থাকতে হবে। কারণ, আমেরিকায় মামলা মানেই তো শুনানির তারিখ পড়বে তাকে আদালতে যেতে হবে, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। আখতার হোসেন কতদিন আমেরিকায় থাকবেন? মামলা করে উনি কি ফিরে আসবেন? তাহলে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো কে চালাবে? শুধু আইনজীবীর ওপর ছেড়ে দিলে কতটা কার্যকর হবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
অতীতের উদাহরণ টেনে মোস্তফা ফিরোজ বলেন, এই ঘটনাটা কিন্তু কোনো তাৎক্ষণিক সহিংস হামলার ঘটনা না। এটা প্রতীকী প্রতিবাদের অংশ যেমন অতীতে বহু রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেও হয়েছে। জর্জ ডব্লিউ বুশের ওপর জুতা নিক্ষেপ করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের ভেতরে কিন্তু সেটাকে কেউ ‘হত্যাচেষ্টা’ বলেনি। ডিম ছোড়া এসব প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবেই পরিচিত। তাই আখতার হোসেনের মামলা কতটা গুরুতরভাবে আমেরিকান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নেবে, সেটা এখনো স্পষ্ট না।
তিনি বলছেন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশে অভিযোগ করতে। পুলিশ নাকি বলেছে মামলা করতে পারেন, সেই প্রেক্ষিতেই মামলা করেছেন। শুধু এয়ারপোর্ট না, হোটেলের লবিতেও নাকি হামলার চেষ্টা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে ১০-২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি জড়িত এবং দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকায় এটা বড় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে কিনা, সেটার অনেক দিক আছে তারা দেখবে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য কী ছিল, শারীরিকভাবে কেউ আঘাত পেয়েছে কিনা, প্রাণনাশের চেষ্টা ছিল কিনা। এসব মিলিয়ে যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে কিছু হতে পারে কিন্তু প্রতীকী প্রতিবাদ হলে সেটা নিয়ে খুব বড় কিছু হবে না।
তিনি আরো বলেন, আমি যে ভিডিওটা দেখেছি, সেখানে মনে হয়েছে যদি পুরো টিমটা একসঙ্গে থাকত যেমন সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ তাহলে ঘটনাটা নাও ঘটতে পারত। কিন্তু জামায়াতের নেতাকর্মীরা অনেকেই অনুপস্থিত ছিল, তাহের সাহেব একা হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তিন-চার মিনিট বক্তব্য দেন, খালেদ মাহমুদকে সাক্ষাৎ দেন। তিনি নিজেই বলছেন নাম ধরে স্লোগান দেওয়ায় অস্বস্তি লেগেছিল, বলেছিলেন মির্জা ফখরুলের নামও নিতে কিন্তু কর্মীরা সেটা শোনেনি।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, এখানে একটা বিষয় বোঝা দরকার যারা এই প্রতিবাদ করেছে, তারা তো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। পাল্টা প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপিপন্থীরা বা প্রবাসী নেতাকর্মীরা যদি জড়ো হতেন, তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেত। এখন দেখা যাচ্ছে, আখতার হোসেন যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে সঙ্গী হিসেবে পিছু নিচ্ছেন কিছু লোক। গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুমতি নিয়ে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই মামলা থেকে হয়তো একটা ‘প্রতীকী অর্জন’ থাকবে কিন্তু এর মাধ্যমে খুব বড় কিছু আদায় হবে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, আমেরিকার পুলিশ তো বাংলাদেশের মতো ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে’ কাউকে ধরে জেলে রেখে দেয় না। এখানে বিচার হয় আইনের প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে। তাই এটাকে বড় জয় ভাবা বোধহয় বাস্তবতা থেকে দূরে যাওয়া।
এবি/টিএ