প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। গত ১৪ মাসে আমাদের সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল অভূতপূর্ব।
গতকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি একথা বলেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে তাদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ড. ইউনূস আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আন্তর্জাতিক আইনের মান অনুযায়ী বিচার চলছে।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) উসকানিমূলক এবং অস্থিতিশীল মন্তব্য অব্যাহত রেখেছেন।’
বৈঠকে উভয় নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগদানের প্রচেষ্টা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার, এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ-প্রাপ্তির প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি পুনরায় আশ্বস্ত করেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- যেখানে দেশের ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটার শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমাদের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত। এখন তারা ফেব্রুয়ারির প্রতীক্ষায় রয়েছেন।’
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই চার্টার—যা রাজনৈতিক সংস্কারের একটি গভীর কাঠামো—স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট স্টাব অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করছে এবং সক্রিয়ভাবে আসিয়ানের সদস্যপদ লাভের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখতে চাই।
আসিয়ানের সঙ্গে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের আবেদন আমাদের পূর্ণ সদস্যপদের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
স্টাব বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতিসংঘের বৈশ্বিক কার্যকারিতা বাড়াতে এর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। ‘বিশ্বব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতেই হবে ‘
এর সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, জাতিসংঘ বড় বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা বাড়ছে, অথচ জাতিসংঘ এখন আর গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কার্যকর প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।’
দুই নেতা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকট এবং বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন।
তাদের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ নিয়েও আলোচনা হয়, বিশেষ করে স্থলবেষ্টিত নেপাল্ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে আলাপ করেন তারা।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এই উদ্যোগ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করবে।’
বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি-বিষয়ক সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
কেএন/টিএ