প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমেরিকা যাওয়ারই দরকার ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেন, ‘এই ভ্রমণ আমার দৃষ্টিতে ছিল একেবারে অপ্রয়োজনীয়। সেখানে যাওয়ারই দরকার ছিল না। মানুষের জীবনে যখন মানুষ অহেতুক কর্ম করে, বিনা প্রয়োজনে ছোটাছুটি করে; এগুলো সবই তাদের জীবন এবং জীবিকার জন্য বুমেরাং হয়ে পড়ে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় রনি বলেন, অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমাদের রিজার্ভের যে টাকা আছে এ টাকা দিয়ে কোনো আপদ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এটা একেবারে সাম্প্রতিক বক্তব্য। আর এর আগে বলা হয়েছিল যে, আমাদের দেশে রিজার্ভ এতটা বেড়ে গেছে যেটা ৩০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। কাজেই টাকা আর রাখা যাচ্ছে না।
কিন্তু বাস্তবতা হলো যে রিজার্ভের যে হিসাব সেই হিসাব স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে কিভাবে হয় এটা দুনিয়ার কেউ না বুঝলেও ড. ইউনূস নিজে বুঝেন এবং তার অর্থনীতিবিদরা বুঝেন।’
‘বিদেশ থেকে ডলার আসছে। কোথায় আসছে? ব্যাংকে। সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে নিচ্ছে।
বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাদেরকে বাংলাদেশি টাকা দিচ্ছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকাটা কোথা থেকে দিবে? সে কি প্রতিনিয়ত টাকা ছাপিয়ে দেবে নাকি এই যে বাংলাদেশের যে টাকা রোল হয়, টাকা বিনিয়োগ হয় এটার উপর থেকে সে টাকা সংগ্রহ করে জনগণের টাকা আপনাদেরকে দেবে। এখানে হলো অর্থনীতির মারপ্যাঁচ।
‘গত এক বছরে নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। জাতীয় যে চারটি ব্যাংক রয়েছে প্রথম শ্রেণীর সোনালী রুপালী জনতা অগ্রণী গত এক বছরে কোনো ঋণ দিয়েছে কিনা আমি জানিনা।
পত্রিকা রিপোর্টে এসেছে যে তারা ঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধ করে রেখেছে। কিছু ঋণ সরকারকে দিচ্ছে, কিছু এলসি হচ্ছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা এতটা খারাপ যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারছে না।’
‘আর এই অবস্থায় প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময়ের জন্য বক্তৃতা দেওয়ার জন্য চলে গেছেন আমেরিকাতে। যেখানে অর্থ নেই, সেখানে বিরাট একটা বহর নিয়ে শত কোটি টাকা খরচ করে তারা আমেরিকাতে যাচ্ছেন। এই হিসাব নেওয়ার মতো, দেওয়ার মতো কোনো পরিবেশ পরিস্থিতি এই বাংলায় নেই।’
শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে রনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন চীন সফরে গেলেন, ওটাও তার জন্য কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিনি এক-দুই মাস পর অস্থির হয়ে যেতেন কোথাও একটা তাকে যেতে হবে, একটা পুরস্কার আনতে হবে, এক জায়গায় একটা ভাষণ দিতে হবে, তারপরে বিদেশ থেকে এসে ঘুরে এসে তার সরকারের ফিরিস্তি সাংবাদিকদের সামনে বর্ণনা করতে হবে। তো শেখ হাসিনার সেই কর্মকাণ্ড যারা মুখরিত ছিল, তারা এখন ড. ইউনূসের যে কর্মকাণ্ড সেই কর্মকাণ্ডে নির্বাক হয়ে গেছে।’
‘এই যে গত ১২ মাসে ১৩ বার তিনি দেশের বাইরে গেলেন, এসব সফরের কার্যকারিতা গুরুত্ব আমার কাছে জিরো। প্রায় প্রতিটি ভ্রমণে তিনি একটা না একটা সমস্যা তৈরি করে ফেলেছেন বাংলাদেশের জন্য। যেমন ধরুন, তিনি কাতারে গেলেন। সেখানে কাতারের আমিরের সঙ্গে তার বৈঠক হলো না। তিনি লন্ডনে গেলেন। কিন্তু সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চেষ্টা করেও বৈঠক করতে পারলেন না। আবার তিনি আমেরিকাতে গেলেন। আজকের দিন পর্যন্ত সাইডলাইনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার যে একটা বৈঠক বা একটা ছবি তোলার মতো সুযোগ তিনি আমেরিকার প্রশাসন থেকে পাবেন; এখন পর্যন্ত আমরা সেটা জানতে পারিনি। তাহলে লাভটা হলো কি?’
‘তিনি এর আগে বিমসটেকে গেলেন। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার চেষ্টা করলেন। হলো না। নরেন্দ্র মোদি পাত্তাই দিলেন না। ড. ইউনূসের মতো একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে কেন এরকম আচরণ হচ্ছে?’
এসএন