রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ও প্রশাসনিকভাবে অনভিজ্ঞ আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়াকে এলজিআরডি মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এসে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাধারণত এত বড় একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দলীয়ভাবে অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতারা পেতেন। অতীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নকে রাজনৈতিক ফ্ল্যাগশিপ বানানোর চেষ্টা করেছেন, তাই যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের মতো নেতারা দায়িত্বে ছিলেন।
সেখানে সজিব ভুইয়াকে এলজিআরডির মতো কৌশলগত ও প্রভাবশালী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া কিছুটা অস্বাভাবিকই মনে হয়েছে। এতে অনুমান করা যায়, এটির পেছনে হয়তো বিশেষ রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমানে এলজিইডি কুমিল্লা জেলায় প্রায় ২,৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে শুধু মুরাদনগর উপজেলাতেই বরাদ্দ ৪৫৩ কোটি টাকা। যা অবিশ্বাস্য রকম বেশি।
একইভাবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর উপজেলা দেবীদ্বার পাচ্ছে ৩৩৮ কোটি টাকা। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদের নিজ জেলা সাতক্ষীরার জন্যও নেওয়া হয়েছে প্রায় ২১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প। এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, ক্ষমতার ঘনিষ্ঠরা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং এটি প্রশাসনিক নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তিনি আরো বলেন, অন্যদিকে দেশের অনগ্রসর ও অবহেলিত জেলা যেমন কুড়িগ্রাম, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, খাগড়াছড়ি, জয়পুরহাট ইত্যাদি জায়গাগুলো সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাচ্ছে।
কোথাও কোথাও পুরো জেলার জন্য বরাদ্দ ১৫ কোটি টাকার নিচে। অথচ এসব এলাকার সড়ক অবকাঠামো অত্যন্ত নাজুক। তাই এ বৈষম্যমূলক বরাদ্দকে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। উন্নয়ন যেন জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী নয়, বরং নির্বাচনী প্রস্তুতি বা পছন্দের লোকদের সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আরো উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রচারণায় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ও আত্মীয়রা সরাসরি জড়িত।
মুরাদনগরে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্পে সজিব ভুইয়ার চাচাতো ভাই ওবায়দুল সিদ্দিকী উপস্থিত থেকে ভাষণে বলেছেন, 'উপদেষ্টা আপনাদের উপহার দিয়েছেন।' এটা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী প্রচারণা ও অনৈতিক প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিত বহন করে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে, এসব ঘটনা ড. ইউনুসূর মতো একজন 'নীতিনির্ভর' উপদেষ্টার চোখের সামনে ঘটছে এবং তিনি তাতেও নিশ্চুপ রয়েছেন। এনসিপির অনেক নেতা অতীতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও আজ তাদের দলের অধীনে বৈষম্য আরো প্রকট আকার নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিকে 'ইতরামি' বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের একচেটিয়া দখল হিসেবে অভিহিত করা ছাড়া উপায় নেই। একদিকে কিছু জেলার পুরো বরাদ্দ মাত্র ১৩-১৫ কোটি টাকা, অন্যদিকে একটি উপজেলাতেই বরাদ্দ ৪৫০ কোটির বেশি। এটি সুস্পষ্ট বৈষম্য ও প্রশাসনিক অপব্যবহার। আর এ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায় এড়াতে পারেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের নৈতিক অবস্থান এবং জনসমর্থন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কেএন/টিকে