সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যে যোগাযোগ বজায় রাখছেন, তা সরকারের জন্য বিব্রতকর, বিপদজনক ও বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। এই কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সরকার দুটি অ্যাপ ‘বোটিম’ ও ‘টেলিগ্রাম’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে এটি বাস্তবায়ন হবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত।
কারণ বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, টেলিগ্রাম, বোটিম, হোয়াটসঅ্যাপসহ হাজারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। যেগুলোর অন্তত ২০–২৫টি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। তাই প্রয়োজনে ব্যবহারকারীরা অন্য মাধ্যমও ব্যবহার করতে পারবেন।’
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গোলাম মাওলা রনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি মনে করেন, চীন ও ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান না থাকলে এ ধরনের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করা আসলে প্রায় অসম্ভব। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাধিকবার ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি কারণ অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে এসব মাধ্যম চালু রেখেছেন। বরং ভিপিএন চালু থাকায় পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য আরো জটিল হয়ে উঠেছিল।
তিনি বলেন, যখন জুলাই-আগস্টের বিপ্লব চলছিল তখন কয়েকদিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে জনরোষ শতগুণ বেড়ে যায়। সে সময় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। ইন্টারনেট বন্ধের কারণে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হয় এবং বর্তমানে তিনি যে দুর্ভোগ ও দুর্দশার মধ্যে আছেন তার একটি বড় কারণ হিসেবে এই সিদ্ধান্তকেই দায়ী করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা রনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনোদিন ইন্টারনেট বন্ধ হবে না, মানুষ অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এই স্লোগানটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই দিয়ে আসছেন। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার জন্য মহাকাশ থেকে পরিচালিত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট অর্থাৎ স্টারলিংক, চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স পরিচালিত স্টারলিংককে দ্রুত বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং এখন তা কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। তো সেখানে শেখ হাসিনার যে যোগাযোগ সেই যোগাযোগকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা এটার সঙ্গে মানান সই হয় না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার তার বক্তব্যে বলছেন আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ লীগ যারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সবাইকে পুনর্বাসিত করবেন, টাকা দিবেন, পয়সা দেবেন। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবেন, এক চুলও ছাড় দেবে না। এইরকম তিনি প্রতিহিংসা ছড়াচ্ছেন এবং এই কথাগুলো শুনে তার নেতাকর্মী যারা আছে তারা বলে এরকমই নেতাই দরকার। এরকম শক্তিশালী নেতা দরকার এবং দুর্বল নেতাদের তো হবে না। তো এই কাজগুলো সরকার করে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ৬-৭ মাস আগেও ভারতের কিছু রাজনীতিবিদ বলেছিলেন শেখ হাসিনাকে দেশে পাঠিয়ে বিচার করা হোক কিন্তু এখন সে সুর নেই। কূটনীতি ও রাজনীতি এত সহজ নয়; এটি গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনার মতো নয়। এখানে ঝুঁকি শতকরা একশো। তিন মাসের জন্য এমপি হওয়া বা এক বছরের জন্য আসা-যাওয়া নয়, রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদি, ঝুঁকিপূর্ণ।
কেএন/টিকে