ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটক অস্ট্রেলীয় ক্যাপ্টেন ম্যাডেলিন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে রাখা হবে বলে; যদি না তিনি একটি ঘোষণা–পত্রে সই করেন। এমনটাই জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
তাসমানিয়ার এই নারী ‘কনশায়েন্স’ নামের ত্রাণবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি গত ৮ অক্টোবর ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে দক্ষিণ ইসরায়েলের কেতসিওত কারাগারে আটক আছেন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানায়, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজবহরের যেসব সদস্যকে আটক করা হয়েছে, তাদের সবাইকে একটি ঘোষণা–পত্রে সই করতে বলা হয়েছে, যেখানে উল্লেখ আছে যে তারা গাজা অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছেন। এই কাগজে সই করলে তাদের তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু হাবিব সই করতে অস্বীকৃতি জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, যারা সই করবেন না, তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েলে আটক রাখা হবে।
সই করুক বা না করুক এর আগে আটক ব্যক্তিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হতো বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতো। তবে এবার সেই নিয়ম মানা হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, একাধিক কর্মী সই না করেও মুক্তি পেয়েছেন, কিন্তু হাবিব এখনও বন্দি রয়েছেন।
অস্ট্রেলীয় সিনেটর ম্যাককিম বলেন, “আমাদের উদ্বেগ হাবিবের প্রতি আচরণ নিয়ে। কারণ নেগেভ মরুভূমির এই উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে মূলত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দিদের রাখা হয়, যাদের অনেককে ইসরায়েল ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত’ বলে অভিযোগ করে।
অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তার সঙ্গে ওই বহরের আরও ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী আটক হন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দিয়ে জর্ডানে পাঠিয়েছে ইসরায়েল। তারা শুক্রবার সকালে সিডনিতে পৌঁছেছেন।
অস্ট্রেলীয় পার্লামেন্টের এক শুনানিতে গ্রিনস দলের সিনেটর নিক ম্যাককিম জানতে চান, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হাবিবের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তবে গোপনীয়তার কারণে কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানাতে পারেননি।
কারাগারে থাকা অবস্থায় হাবিব জানিয়েছেন, তিনি ‘অপমানজনক আচরণের’ শিকার হয়েছেন, যদিও কোনও শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি।
অস্ট্রেলীয় কনস্যুলার কর্মকর্তাদের তিনি আরও জানান, তাঁকে কেবল বাসি রুটি ও বিবর্ণ রঙের কলের পানি দেওয়া হয়েছে। তিনি সন্দেহ করছেন তার সেলে ছারপোকা রয়েছে, যদিও তার ভাষায় ‘এমন খারাপ পরিবেশে’ তিনি আগে জাহাজ বা হোস্টেলেও থেকেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং জানিয়েছেন, সরকার গোপনীয়তার কারণে প্রকাশ্যে বিস্তারিত জানাতে পারছে না। তবে আশা করছে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ করবে।
অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি ছুটির কারণে আগামী বুধবারের আগে তারা আবার হাবিবের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী রবিবার হাবিবকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই বিষয়ে ইসরায়েলি দূতাবাস ও সরকারের কাছেও প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
এমআর/টিকে