যুদ্ধ বিরতির পর বিপদে পড়েছেন নেতানিয়াহু

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গত দুই বছরে বহু প্রাণহানি ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। শেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। তবে এ যুদ্ধবিরতিতে বিপদ বাড়ছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। সমালোচকরা বলছেন, এ যুদ্ধকে নেতানিয়াহু নিজ রাজনৈতিক অবস্থান, এমনকি তার স্বাধীনতার (বিভিন্ন মামলা থেকে মুক্তি) চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এসব সমস্যার একটিও মুছে যায়নি।

নেতানিয়াহু কি আরও একা হয়ে পড়বেন: বর্তমানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যতটা নিঃসঙ্গ, অতীতে কখনো এতটা ছিল না। গত দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খাদ্য অবরোধে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। স্বল্পমেয়াদে, যদি না নেতানিয়াহু সরকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের স্থায়ীভাবে গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বিশ্বের গণমাধ্যমে এ হত্যাযজ্ঞের চিত্র আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে। এটি ইসরায়েলের একঘরে অবস্থানকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে।

দক্ষিণপন্থিরা কি নেতানিয়াহুর জোট সরকার ভেঙে দিতে পারেন: এটি সম্ভব। তবে নেতানিয়াহু এরই মধ্যে সেই ঝুঁকি এড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। যুদ্ধ চলাকালে ও এর আগে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কের সময়েও চরম দক্ষিণপন্থিদের ওপর নির্ভর করেছেন তিনি। সবচেয়ে দৃশ্যমানভাবে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির—দুজনই যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনো নেতানিয়াহুর জোটে আছেন। যদি আইসিজে ইসরায়েলকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তবে অনেকেই সে জন্য সরাসরি নেতানিয়াহুকেই দায়ী করবেন।

আইসিসি ও আইসিজে কি নেতানিয়াহুকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন: হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করতে পারেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আইসিসি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অন্যদিকে, আইসিজেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জাতি হত্যার মামলা শুনছেন। যদি আদালত ইসরায়েলকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তবে অনেকেই সে জন্য সরাসরি
নেতানিয়াহুকেই দায়ী করবেন।

ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে পরিত্যাগ করতে পারেন: এ সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ভরসা। ওয়াশিংটনের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল আর নেতানিয়াহু মারাত্মক বিপদে পড়বেন। যতই নেতানিয়াহু দাবি করুন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনেরও সীমা আছে। ২০২১ সালে ট্রাম্প নাকি ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এমনকি গত মে মাসে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বলে জানা যায়। এখন যদি নেতানিয়াহু সেই স্থিতাবস্থা নষ্ট করেন, ট্রাম্প যে ভালোভাবে নেবেন না, তা বলাই যায়।

৭ অক্টোবরের হামলার আগে নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে কি তদন্ত হবে: এ সম্ভাবনা এখন ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় প্রায় ২৫০ জনকে। এ ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে, ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে গুরুতর দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতা ছিল। তারা এমন আক্রমণের কোনো পূর্বাভাসই ধরতে পারেনি। পৃথক তদন্তের পর সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান—দুজনই পদত্যাগ করেন।
নেতানিয়াহু অন্যান্য তদন্তে কোনো আপত্তি জানাননি, তবে নিজ সরকারের ভূমিকা নিয়ে হওয়া তদন্তের তিনি বিরোধ করেছেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত সর্বসম্মতভাবে রায় দেন যে, তদন্ত বিলম্বের কোনো যৌক্তিক কারণ আর নেই।

নেতানিয়াহুর কি জেলে যাওয়ার শঙ্কা আছে: হ্যাঁ, তা রয়ে গেছে। গত সোমবার ট্রাম্প নিজেই গাজার যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলার যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতি মামলা চলছে। যুদ্ধকালেও নানা বিলম্ব সত্ত্বেও মামলাগুলোর কার্যক্রম থেমে থাকেনি। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গুলশানে প্লট দখলের মামলায় সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পেছাল Oct 19, 2025
img
ব্যথা ভুলে ফ্লোরে দিতিপ্রিয়া, বন্ধুর মতো পাশে জীতু Oct 19, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার মতো কোনো শক্তি নেই : ফারুক Oct 19, 2025
img
অনেক দিন রান না পেলে মনে সন্দেহ ঢুকে পড়ে: ল্যাবুশেন Oct 19, 2025
img
অক্টোবরের ১৮ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার Oct 19, 2025
গ্রহণযোগ্যতা কমছে বাংলাদেশি পাসপোর্টের Oct 19, 2025
img
ধর্ম অবমাননা মামলায় নর্থ সাউথ শিক্ষার্থী অপূর্ব পালের স্বীকারোক্তি Oct 19, 2025
img
দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে টহল ও নজরদারি জোরদার Oct 19, 2025
img
গাজা যুদ্ধের নাম 'মুক্তিযুদ্ধ' করার প্রস্তাব নেতানিয়াহুর Oct 19, 2025
img
পরিমাপের ক্ষেত্রে মানসম্মত পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম: প্রধান উপদেষ্টা Oct 19, 2025
img
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ চালু করছে ডাকসু Oct 19, 2025
img
সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ে ডাকা হলো জরুরি বৈঠক Oct 19, 2025
img
কার্গো ভিলেজের আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ: ফায়ার সার্ভিস পরিচালক Oct 19, 2025
img
দীপাবলির অনুষ্ঠানে বাঙালি পোশাকে নজর কাড়লেন সাইফ Oct 19, 2025
img
স্টার্কের ‘বুলেট বল’ ১৭৬.৫ কিমি! Oct 19, 2025
img
শিল্প-সাহিত্যকে নোংরা রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে : বেবী নাজনীন Oct 19, 2025
img
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না : ইসি আনোয়ারুল Oct 19, 2025
img
রাঘব-পরিণীতির ঘরে এলো নতুন অতিথি Oct 19, 2025
img
শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস দিলেন মির্জা ফখরুল Oct 19, 2025
img
ইসিকে গনিমতের মাল হিসেবে ভাগ করে নিয়েছে : নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী Oct 19, 2025