হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেছেন, যেখানে আগুন লেগেছিল, সেটি মূলত ইমপোর্ট কার্গো এলাকা। এই জায়গাটি পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, কাস্টমস, সিএনএফ এজেন্ট এবং কুরিয়ার এজেন্টরা। তাদের বাইরের লোকজন ঢোকা–বেরোনোর জন্য এক্সেস কন্ট্রোল আট নম্বর গেটে। সেই প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের, কিন্তু ভেতরের কার্গো ব্যবস্থাপনা ওই সংস্থাগুলোর।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বেবিচক সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। চেয়ারম্যান বলেন, ওই এলাকায় প্রায় ১৪০টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছিল। আমরা কাগজপত্রে প্রমাণ পেয়েছি, নিয়মিত ফায়ার সেফটি কার্যক্রম চলত। শুধু জুন মাসেই প্রায় ২০০ জন কর্মীকে ফায়ার ড্রিল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতি সপ্তাহে এক দিন আমরা ফায়ার ড্রিল অনুশীলন করি। এটি সাধারণত বিমান সংক্রান্ত দুর্ঘটনা বা আগুনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন আমাদের ফায়ার টিম বিভিন্ন সেকশনে গিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়।
মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, আগুনের পরও বিমানবন্দরের কার্গো অপারেশন একদিনের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি। বর্তমানে নয় নম্বর গেট দিয়ে সাময়িকভাবে কার্গো ক্লিয়ারিং কার্যক্রম চালু আছে, এবং স্থায়ী কাঠামো দ্রুত গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইকাও এর ফায়ার সেফটি প্রোটোকল মেনে চলি। কতজন জনবল ও কত ইউনিট ফায়ার ভেহিকল থাকতে হবে, সে ন্যূনতম মান আমরা পূরণ করি।
চেয়ারম্যান জানান, আগুন লাগার পর দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে বিমানের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ৯টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়। মোট ১৫টি ফ্লাইট ডাইভার্ট করতে হয়। এর মধ্যে আটটি চট্টগ্রাম, দুটি সিলেট, চারটি কলকাতা এবং একটি কাঠমান্ডুতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে তিনটি ছিল অভ্যন্তরীণ, ১১টি আঞ্চলিক ও একটি কার্গো ফ্লাইট।
বেবিচক চেয়ারম্যান আরও জানান, আগুনের কারণে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি হয়েছিল। তবে পরদিন বিকেল চারটার মধ্যে সব ব্যাকলগ ক্লিয়ার করা সম্ভব হয়েছে। বিকেল চারটার পর থেকে সব ফ্লাইট স্বাভাবিকভাবে চলছে।
তিনি বলেন, যেসব এয়ারলাইন অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করেছে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে, উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন ২১ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের জন্য সব ধরনের কর ও চার্জ মওকুফ থাকবে। এটি যাত্রীসেবার স্বার্থে একটি ভালো সিদ্ধান্ত।
কার্গো কার্যক্রম প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ইমপোর্ট কার্গো ভিলেজ পুড়ে গেলেও, আমরা রাত আড়াইটা পর্যন্ত সেটি সচল রেখেছিলাম। এরপর উপদেষ্টার নির্দেশনায় নয় নম্বর গেট দিয়ে নতুন করে কার্গো ক্লিয়ারিং চালু করেছি। এটি আপাতত সাময়িক ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে নতুন কাঠামো গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে একাধিক উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এই কমিটিগুলোর প্রতিবেদন পেলে আমরা জানব কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটল, ভবিষ্যতে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আমরা আশা করছি, এই তদন্ত থেকেই ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
এবি/টিকে