শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রিজনভ্যানেই ট্রাইব্যুনাল ছাড়লেন ১৫ সেনা কর্মকর্তা

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-খুন ও জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের কোথায় রাখা হবে তা সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ।

আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ফটক দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে সকাল সোয়া ৭টায় বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান লেখা সবুজ রঙের গাড়িতে করে এই ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আনা হয়। গাড়িটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল।

এদিন সকাল ৮টার পর তিন মামলার ওপর শুনানি হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আদালতে হাজির হওয়া ১৫ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আজ তিনটি মামলার মোট ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে র‌্যাবের টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ আসামির ১০ জনকে আনা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সাতদিন তথা ২৯ অক্টোবরের মধ্যে এ বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। একইসঙ্গে আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।

জেআইসি বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গুমের অভিযোগে আরেকটি মামলায় ১৩ আসামির তিনজনকে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ মামলায় পরবর্তী শুনানিও একই দিন ঠিক করা হয়।

এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজির হওয়া দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তবে পলাতক দুই আসামি হাজির না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, ৮ অক্টোবর পৃথক এ তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর একটিতে ১৭, আরেকটিতে ১৩ ও অন্যটিতে ৪ জনকে আসামি করা হয়। তবে দুটিতেই শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন ২৫ জন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১১ অক্টোবর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সেনাসদর।

১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন- র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম। ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা উপলক্ষ্যে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোর থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালসহ হাইকোর্টের মাজারগেট এলাকা। এখানে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি-সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা গেছে। সবমিলিয়ে বাড়ানো হয় ব্যাপক নিরাপত্তা।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিয়ে আমার অশ্লীল ভিডিও বানানো হয়েছে : জুমা Oct 22, 2025
img
কিডনি রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া উচিত Oct 22, 2025
img
দেশ রাজনীতির নতুন ব্যাকরণ শিখতে বসেছে : জিল্লুর রহমান Oct 22, 2025
img
ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাকিস্তান Oct 22, 2025
img
ভোটে কোনো চাপের কাছে মাথা নত না করতে ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ সিইসির Oct 22, 2025
img
বাজির শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়লেন ভারতীয় অভিনেতা Oct 22, 2025
img
১৫ সেনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হল সেনানিবাসের সাব-জেলে Oct 22, 2025
img
৩০ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট Oct 22, 2025
img
টেলিযোগাযোগ সেবায় অগ্নি নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ বিটিআরসির Oct 22, 2025
img
মতবিরোধের জেরে জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু Oct 22, 2025
img
নির্বাচনে ভালো দায়িত্ব পালন করলে পুরস্কারের ঘোষণা ইসি আনোয়ারুলের Oct 22, 2025
img

বিবিসি ও ইবিইউ সাম্প্রতিক জরিপ

সংবাদবিষয়ক প্রশ্নে অর্ধেক সময় ভুল তথ্য দেয় এআই মডেল Oct 22, 2025
ক্যান্টনমেন্টের এসি রুমে রাখলে ন্যায় বিচার হবে না- বললেন হাসিনুর Oct 22, 2025
img
অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতে হবে : ইউএনওদের ইসি Oct 22, 2025
img
স্ত্রীদের ৩৩ বছর হলেই ভেঙে যায় টম ক্রুজের সংসার, কাকতালীয় না ভাগ্যলিখন? Oct 22, 2025
img
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিদায়, শেষ স্লটের লড়াইয়ে ৩ দল Oct 22, 2025
img
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ Oct 22, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিকেলে এনসিপি ও সন্ধ্যায় জামায়াতের বৈঠক Oct 22, 2025
img
৮ দাবি নিয়ে এবার মাঠে নামছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি Oct 22, 2025
img
কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকী আজ Oct 22, 2025