শিল্পী সমিতির নির্বাচন শিল্পীদের হাসির পাত্রে পরিণত করেছে : শাকিল খান

চিত্রনায়ক শাকিল খান, ১৯৯৪ সালে ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে পদার্পণ করেন। ১৯৯৭ সালে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমার ঘর এই বেহেশত’ মুক্তি পায়। এরপর একচেটিয়া ব্যবসা করে তাঁর বেশকিছু চলচ্চিত্র। আকস্মিকভাবেই তিনি চলচ্চিত্র ছেড়ে দেন।

ক্যারিয়ার, ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি কথা বললেন দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে।  

আমি সেই সময় চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়েছি যখন আমি লাখ লাখ টাকা ইনকাম করি, যখন আমার সিনেমা বেশ ভালো ব্যবসা করছে। কিন্তু দেখলাম আশপাশে অশ্লীলতার ছায়া। কোনোভাবেই নিজেকে অশ্লীলতার স্পর্শে যেতে দিতে চাইনি।



সেই অশ্লীলতার কারণে আর চলচ্চিত্রে থাকিনি। চলচ্চিত্র ছেড়ে দিলাম। কেননা আমার মনে হয়েছে, আমি সমাজকে কী উত্তর দেব। একটা সময় আসবে, তখন আমার সন্তানদের কী উত্তর দেব?  এ কারণে আমি আমার ক্যারিয়ারের ভরা সময়েও চলচ্চিত্র ছেড়ে দিয়ে আসছি।

এখন কি এফডিসিতে আসেন না, শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও দেখি না...
শিল্পী সমিতির নির্বাচন একটা ফালতু জিনিস। শিল্পী সমিতির নির্বাচন শিল্পীদের হাসির পাত্রে পরিণত করেছে। এখন শিল্পী সমিতিতে আছে কারা? দুইটা সিনেমা করেই সে নিজেকে দাবি করে শিল্পী সমিতির কর্ণধার। অথচ তাকে আমরা চিনিই না। কদিন আগে ফুটবল খেলা হলো, সেখানে নাকি সুপারস্টার আর ডিরেক্টররা অংশ নিয়েছে।

সেখানে সুপারস্টার কারা? একজনকেও তো চিনি না। তারা বিভিন্ন আয়োজন করে, কিন্তু আসল শিল্পীকে তারা বলে না। রুবেল ভাই শিল্পী সমিতিতে রয়েছেন, তিনি সেটাকে ঠিকঠাক করতে পারেন, কিন্তু করছেন না। ফলে সেটা একটা অথর্ব প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। 


শিল্পী সমিতির নির্বাচন একেবারে প্রয়োজন নেই। শিল্পীদের হাসির পাত্রে পরিণত করার প্রয়োজনটা কী। আর সমিতি দিয়ে চলচ্চিত্রের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না, বরং হচ্ছে ক্ষতি।
আপনার মতে সুপারস্টার কারা? 

সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে দেখা যাচ্ছে, এখন যে কেউ যত্রতত্র সুপারস্টার তকমা লাগিয়ে নিচ্ছে। অথচ এক ঈদে আমার ১৬টা সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ৯৮ সালে আমার সিনেমা ‘এই মন তোমাকে দিলাম’  সুপার ডুপার বাম্পার হিট। কই আমি তো নিজেকে সুপারস্টার দাবি করতে পারছি না। অথচ অনেকেই এখন সুপারস্টার দাবি করে বেড়ায়। একটি বা দুটি সিনেমা করেই তাদের হাতে প্রচুর পয়সা। শাবানা ম্যাডাম, রাজ্জাক সাহেবরাও কিন্তু নিজেদের তকমা নিয়ে ভাবেননি। আর এখন হল নেই, আছে প্রচুর সুপারস্টার। 

না না, কোটি নয়, অর্ধকোটিরও কম নেন, আমি যতটুকু জানি। সেটা বিষয় না, বিষয় হলো এখন তাঁর কদর আছে, তিনি নিচ্ছেন। কিন্তু চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে তো আরো নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। এক শাকিব খানের পাশাপাশি আরো অভিনেতা তৈরি করতে হবে। 

চলচ্চিত্রের মানুষদের প্রতি আপনার একধরনের অভিযোগ আছে নিশ্চয়ই... 
দেখেন, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের মানুষরাই শত্রুতে পরিণত হয়। যারা আপনার সঙ্গে কাজ করে, আপনাকে নিয়ে কাজ করে তারাই শত্রুতে পরিণত হয়। ফলে একটা নক্ষত্রও হারিয়ে যায়। সালমান শাহ একটি হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র। আমি দেখেছি, আমি সালমানের পাশেই শুটিং করেছি, আমি দেখেছি সে কতটা হতাশায় ছিল। কাজ করত অন্যমনষ্ক হয়ে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকত। এ অবস্থায় একটা মানুষ কতদূর সার্ভাইভ করতে পারে? তাকে পরিচালক সমিতি বয়কট করেছিল, তাকে নানাভাবেই ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এভাবেই আমরা একজন নক্ষত্রকে হারিয়ে ফেলেছি।

আপনার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বলুন, আপনি তো সংসদ নির্বাচনে করতে চেয়েছিলেন... 
দেখেন আমি হাজার হাজার টাকা আয় করি না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু নায়ক আছে যাদের অনেক টাকা, হয়তো ছবি কম কিন্তু সুপারস্টার তকমা লাগিয়ে নিয়েছে। আমি তেমন না। আমি আসলে রাজনীতি করতেই চাই মানুষের জন্য। ওই যে বললাম, আমার হাজার হাজার কোটি টাকা নেই। কিন্তু এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। তাদের যে কোনো দুঃখ-কষ্টে আমি পাশে থাকছি। এলাকার মানুষেরাও আমাকে নির্দ্বিধায় তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলছেন। আমি রাজনীতি করতে চেয়েছি মানুষের জন্য। এটা তো নৈতিকতা। আমার রাজনীতি মানেই যে মানুষকে মারতে হবে, গালাগালি করতে হবে তা নয়। আমার রাজনীতি হলো মানুষের জন্য কাজ করা।

আপনার পরিবার নিয়ে বলুন, অনেকেই নানা সময়ে জানতে চান, পরিবার নিয়ে আপনি কেমন আছেন...  
আমার পরিবারে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। আমার মেয়ে সামিকা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ইংরেজি মাধ্যমে। বড় ছেলে সাদমান। ওর মা একজন নারী উদ্যোক্তা। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর আমি তো ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত, আমার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। সেসব নিয়েই ব্যস্ত সময় কেটে যায়, আর সুযোগ পেলেই আমার সন্তানদের নিয়ে সময় কাটাই। আমার মেয়ে সামিকা তো বাবা অন্ত প্রাণ। সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আমি খুবে সুখে আছি।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ: রেলপথ মন্ত্রণালয় Nov 12, 2025
img
একটি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গভীর যোগাযোগ রয়েছে: রিজভী Nov 12, 2025
img
চট্টগ্রামে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের ৬৭০০ কোটি টাকার অর্থায়ন Nov 12, 2025
img
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একদম আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : তাসনিম জারা Nov 12, 2025
img
সালমানের খামারবাড়ির ভেতরের রহস্য ফাঁস করলেন শেহনাজ গিল Nov 12, 2025
img
মানুষের ভালোবাসার দল বিএনপি : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু Nov 12, 2025
img
মধ্যরাতে কৃতি শ্যাননকে হৃত্বিকের ফোন, অবাক অভিনেত্রী! Nov 12, 2025
img
পারিশ্রমিক বৈষম্যে ক্ষোভ প্রকাশ কঙ্গনার Nov 12, 2025
img
রানা প্লাজা ছিল আ.লীগের তৈরি ট্র্যাজেডি: প্রেস সচিব Nov 12, 2025
img
মার্কিনিদের যথেষ্ট মেধা নেই: ট্রাম্প Nov 12, 2025
img
বোমা তৈরির সময় হাতেনাতে আটক ৩ যুবক Nov 12, 2025
img
মুক্তির আগে আয় দিয়ে বাজিমাত করল থালাপতি বিজয়ের শেষ সিনেমা Nov 12, 2025
img
আয়কর নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন ঐশ্বরিয়া Nov 12, 2025
img
আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা Nov 12, 2025
img
১০০ বছর অপেক্ষা করলেও গণভোট ঠেকানো যাবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 12, 2025
img
রমনা থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা: ডিএমপি Nov 12, 2025
img
১৩ নভেম্বরের লকডাউন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই: ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম Nov 12, 2025
img
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক Nov 12, 2025
img
আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক জামায়াত নেতাদের Nov 12, 2025
img
তরুণদের নেতৃত্বে নতুন জাগরণ ঘটেছে: প্রধান উপদেষ্টা Nov 12, 2025