জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে জালিয়াতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজিজুর রহমান বিষয়টি দেশের একটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউপি-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উপসচিব মো. নুরে আলমের স্বাক্ষর রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম (নিবন্ধক) অবৈধভাবে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড হস্তান্তর করে আইনবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছেন, যা BDRIS সিস্টেমের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানের এই কর্মকাণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগকে আইনবিরুদ্ধ ও জনস্বার্থের পরিপন্থি করেছে। তাই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে পদচ্যুত করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, গত এক বছরে একই ব্যক্তিদের একাধিকবার বাবা ও মা দেখিয়ে মোট ২০টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রুমি বেগমকে ১১টি এবং রবিউল হাসানকে ৯টি জন্ম সনদে যথাক্রমে মাতা ও পিতা হিসেবে দেখানো হয়। ২০২৪ সালের ৩১ মে রুমি বেগম-বাদশা মিয়া দম্পতিকে বাবা-মা দেখিয়ে ৭টি, রুমি বেগম-বজলু মিয়াকে বাবা-মা দেখিয়ে ৪টি এবং ১৪ মে রবিউল হাসানকে বাবা দেখিয়ে ৯টি জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়। তদন্তে এসব সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়।
এর আগে গত ১৩ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আকন্দের নিবন্ধন সহকারীর দায়িত্বও বাতিল হয়। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. সালাহউদ্দিন।
জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতির পাশাপাশি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভাতা বিতরণ, উন্নয়ন প্রকল্প ও ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল লতিফ সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ইউএনও বরাবরে দাখিল করেছেন, যদিও সেটির তদন্ত এখনো শুরু হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্ত জাহাঙ্গীর আলম দামোদরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দলীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে নয়-ছয়, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন।
অভিযোগ ও বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান হওয়ার আগে জাহাঙ্গীর আলম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাঠকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মে জড়িত ছিলেন। প্রমাণিত দুর্নীতির ঘটনায় তখন তিনি বরখাস্ত হন এবং আত্মসাৎ করা অর্থ পরে ফেরত দেন।
টিজে/টিএ