মানবতাবিরোধী অপরাধ

আশুলিয়ায় ঘটনায় আজ জেরার মুখে রাজসাক্ষী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চব্বিশের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হকের জেরা আজ। আসামিপক্ষ ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীরা তাকে জেরা করবেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বেলা ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা শুরু হবে।

ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

রাজসাক্ষী আবজালুলের জেরা শেষে আরও দু-তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই যুক্তিতর্কে এগোবে মামলাটি। সবমিলিয়ে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে প্রসিকিউশন।

এর আগে, গতকাল বুধবার এ মামলায় ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে মুখ খোলেন আবজালুল। রাজসাক্ষী হয়ে পুরো সত্য উদঘাটনের কথা ছিল তার। তবে অনেক কিছুই যেন চেপে রেখেছেন তিনি। ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে বহু তথ্য সামনে আসেনি বলেও মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যদিও রাজসাক্ষী হিসেবে নিজের জানা সবকিছুই প্রকাশ করেছেন বলে দাবি প্রসিকিউশনের।

এদিন বেলা ১১টায় সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন আবজালুল। এরপর পরিচয় দিয়ে সাক্ষ্য শুরু করেন। মিনিট পঞ্চাশেকের মধ্যেই তার জবানবন্দি সম্পন্ন হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট থানার সামনে লাশ পোড়ালেও নিজ চোখে দেখেননি তিনি। থানায় অস্ত্র-গুলি জমা দিতে গেলে ১৫ আগস্ট অন্যের মুখে শোনেন তিনি। অর্থাৎ ৫ আগস্ট লাশ পুড়িয়েছিলেন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ।

সবশেষ তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

চলতি বছরের ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করা হয়। একইসঙ্গে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান তিনি।

গত ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে হয়নি। যদিও আসামিদের হাজির করা হয়েছে। ১২ নভেম্বরও একই কারণে সাক্ষীকে হাজির করেনি প্রসিকিউশন। ৫ নভেম্বর ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব। তার সামনেই একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এমনকি তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকেও আগুনে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।

৩০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন গুলিবিদ্ধ হওয়া ভুক্তভোগী সানি মৃধা। ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে পুলিশের গুলিতে নিজে আহত হওয়ার কথা জানান তিনি।

একইসঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নির্মমতার দৃশ্যের বিবরণ দেন। ২৯ অক্টোবর জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান। তিনি একই থানার ওসির নির্দেশে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেন বলে জানিয়েছেন। পরে থানায় জমা দেন এ আলামত।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। এর আগের দিন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল।

তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মাসুদ কামালের প্রশ্ন Nov 20, 2025
img
নারী পুলিশ চরিত্রে নতুন ধারার সূচনা বলিউডে Nov 20, 2025
img
মজুরি বাড়ছে ১৩ খাতের শ্রমিকদের Nov 20, 2025
img
র‍্যাপিড পাসে সাড়া মিলছে না, রয়েছে যাত্রীদের অভিযোগও Nov 20, 2025
img
প্রেমের পথেই জীবন সাজাতে চান ভাগ্যশ্রী Nov 20, 2025
img
মুশফিক ছাড়াও শততম টেস্টে ইতিহাস রয়েছে যাদের Nov 20, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনী দিবস শুক্রবার Nov 20, 2025
img
পিসিবির সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানলেন আজহার আলি Nov 20, 2025
img
আরব আমিরাতে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি ৩ ল্যান্ডিং ক্রাফট Nov 20, 2025
img
১৪ মাস পর লিটনের সেঞ্চুরি, চারশ’র পথে বাংলাদেশ Nov 20, 2025
img
রাহু কেতুতে শালিনীর নতুন রূপ মীনু Nov 20, 2025
img
বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌঁছালো ৩০ দেশের প্রতিযোগী Nov 20, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের অতীতের রায় ছিল কলঙ্কিত : আপিল বিভাগ Nov 20, 2025
img
রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, অনলাইনে দেওয়ার পদ্ধতি Nov 20, 2025
img
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ : শ্রম উপদেষ্টা Nov 20, 2025
img
২৫২ কোটি রুপির মাদক চক্রে ওরির নাম Nov 20, 2025
img
তিনটি রাজস্ব আইনের অফিসিয়াল ইংরেজি টেক্সটের গেজেট প্রকাশ Nov 20, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরাতে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হওয়ার আহ্বান Nov 20, 2025
img
ঢাকা আসা প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন আতিফ আসলাম Nov 20, 2025
img
শৈত্যপ্রবাহ না আসা পর্যন্ত নভেম্বরজুড়েই চলবে ‘এই শীত, এই গরম’ Nov 20, 2025