আরও ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ে চাপ দিচ্ছে আইএমএফ

চলতি বছরের জানুয়ারিতে অপ্রত্যাশিতভাবে কর বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চায়, আগামী অর্থবছরে কর ছাড় কমিয়ে ও করের হার বাড়িয়ে সরকার অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করুক। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে গণমাধ্যম।

এ অবস্থায় এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত এ রাজস্ব সংগ্রহ করা না গেলে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি যা ইতোমধ্যে মার্চ থেকে বিলম্বিত হয়েছে এবং আসন্ন পঞ্চম কিস্তি পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

তারা আরও বলেন, আইএমএফ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দাবিগুলো জানায়নি। তবে আগামী শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকায় সংস্থাটির প্রতিনিধি দল আসার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এসব শর্ত উপস্থাপন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, জানুয়ারির কর বৃদ্ধির ধাক্কা এখনো পুরোপুরি সামলানো যায়নি। তা ছাড়া সব কর ছাড় একসঙ্গে বাতিল করাও সম্ভব নয়।
এনবিআরের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে কিছু কর ছাড় পুরোপুরি তুলে দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য কিছু কর ছাড় বিশেষ করে আয়করের ক্ষেত্রে বাতিল করা যেতে পারে। তবে, তা রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে এমন নিশ্চয়তা নেই।

আবার শুধু কর বাড়ালেই রাজস্ব বাড়বে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কর ফাঁকি রোধ, করজালের সম্প্রসারণ এবং করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য অটোমেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন করাও জরুরি

এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করে, তাহলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হবে জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আদতে শুধু কর বাড়িয়ে বা ছাড় কমিয়ে এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব নয়।

অতীতে অনেক দেশ আইএমএফের শর্ত মেনে চলতে গিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিজস্ব সক্ষমতার ভিত্তিতে অর্থনীতি পরিচালনার পরিকল্পনা নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ যদি ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখে, তাহলে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও তাদের বাজেট সহায়তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের শুরুতে স্বাক্ষরিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির অংশ হিসেবে আইএমএফ ৩০টিরও বেশি সংস্কারের শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে বার্ষিক রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।

এমনকি জানুয়ারিতে ভ্যাট ও কর বৃদ্ধির পরও রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে মতবিরোধের কারণে চতুর্থ ঋণের কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ আগামী জুন মাসে দুটি কিস্তি পাওয়ার আশা করছে। তার আগে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকা সফর করবে। এ সময় প্রতিনিধি দলটি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং পরদিন এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক বসবে।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
২০২৪ সালের বন্যা স্বাভাবিক ছিল না : প্রধান উপদেষ্টা Apr 30, 2025
img
বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফারুক Apr 30, 2025
img
আল্লাহর ওয়াস্তে বলিউড মুভি বানিয়ে ফেল না: আফ্রিদি Apr 30, 2025
img
মোদির আগ্রাসন পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছে : ইমরান Apr 30, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, 'পাকিস্তান প্রথম হামলা করবে না, পিছুও হটবে না' : ইসাক দার Apr 30, 2025
img
একটু আদরে আমাকে রাখো : মাহিয়া মাহি Apr 30, 2025
img
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি Apr 30, 2025
img
স্বামীকে কিছু না জানিয়ে কখনো কিছু করি না : অঞ্জনা বসু Apr 30, 2025
img
৮ মে রমনা বটমূল বোমা হামলা মামলার রায় Apr 30, 2025
img
রাজবাড়ীতে ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা Apr 30, 2025