নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা চাইলেন তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচনের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবারও বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ… সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে। রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন ও পরিবর্তনে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে সক্ষম হবে না।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনীতির ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন। উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য এক ও অভিন্ন। কী সেটি? সেটি হচ্ছে দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগণের কল্যাণ সাধন। তবে যে রাজনৈতিক দলটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে, গণতন্ত্র হারিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্ম দিয়েছিল, সংবিধান, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল, গুম-খুন-অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গণতন্ত্রকামী জনগণ দেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তিকে কখনোই মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে পলাতক স্বৈরাচার জনগণের ভোট ছাড়াই তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজ জানতে চায় সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা নিয়েছে। ব্লেইম গেম দিয়ে কিন্তু দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন তাদের আমি বলতে চাই, লুটপাট ও দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে সারা দেশে স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার অপেক্ষায়। স্থানীয় নির্বাচন পলাতক স্বৈরাচারের জন্য পুনর্বাসিত হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা বলেছেন তারা হয়ত এই বিষয়টি বিবেচনা করেননি। আমি অনুরোধ করব বিষয়টিকে এভাবে বিবেচনা করার জন্য।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বাধীনতার বার্তা উপেক্ষা করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার দীর্ঘ দেড় দশক স্বাধীন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, পরাজিত তাঁবেদার অপশক্তি ও তাদের দোসররা আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটিই হোক বাংলাদেশের আজ এবং আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।
তিনি বলেন, জনগণকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্কারই হয়ত টেকসই হবে না। এ কারণেই রাষ্ট্র-রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে এটাই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রীতি। অথচ আমরা খেয়াল করছি গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে দেশে এমন একটি আবহ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানোই যেন এক অপরাধ। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞা সূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়। অপরপক্ষে এটি গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য অপমানজনক। রাষ্ট্র-রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কারের জন্য যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অবজ্ঞা করতে হয় তাহলে সংস্কারের তাৎপর্যটা কি? এটি বহু মানুষের প্রশ্ন আজ।

তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন এত সময়ক্ষেপণ করছে। এই নিয়েও জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়ে চলেছে।
এসময় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ এবি পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা।

আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজধানীতে ভিডিও করার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীর প্রাণ গেল May 03, 2025
img
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহাব্বত গ্রেফতার May 03, 2025
img
কাজ হারাতে চলেছেন শাহরুখ, অমিতাভ, জায়গা নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা! May 03, 2025
img
ব্যবসায়ীদের হুট করে রাজনীতিবিদ হওয়া নিয়ে যা বললেন শ্রম উপদেষ্টা May 03, 2025
img
৩ ভারতীয়র মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলো ইন্দোনেশিয়ার আদালত May 03, 2025
img
সময় পেলেই আলোচনা করছি, সন্তানের জন্য কী কী কিনব : পিয়া May 03, 2025
img
আয়ারল্যান্ডের কাছে জায়গা হারাল বাংলাদেশ May 03, 2025
img
‘কৃষিতে ভর্তুকি দিতে প্রয়োজনে আইএমএফ থেকে বেরিয়ে আসবে সরকার’ May 03, 2025
img
ব্রাজিলের কোচ হওয়ার আশায় আল-হিলাল থেকে পদত্যাগ, এখন কী হবে? May 03, 2025
img
‘বিতর্ক প্রতিযোগিতা শিক্ষার উন্নতিতে সহায়তা করে’ May 03, 2025