যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতির ফলে অসংখ্য অভিবাসীর মতোই চরম মানসিক সংকটে পড়েছে কলম্বিয়ার সিন্ডি এসত্রাদা ও তার পরিবার। নিউ জার্সিতে বসবাসকারী এ পরিবারটিকে গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ দেয় সরকার। এতে তারা আতঙ্ক, উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান এসত্রাদা।
৩৬ বছর বয়সী এই নারী ব্যবসায়ী জানান, তিন বছর আগে স্বামীর ব্যবসা চাঁদাবাজদের টার্গেট হওয়ার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারা।
এখন যুক্তরাষ্ট্রে এসেই তাদের ওপর শুরু হয়েছে আইনি চাপ, স্বামীর পায়ে পরানো হয়েছে ইলেকট্রনিক নজরদারি যন্ত্র, আর মানসিক চাপে তাদের ১৬ বছর বয়সী ছেলে স্কুলে পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না।
এসত্রাদা বলেন, ‘সে এখন নখ খুঁটে, রাতে ঘুমাতে পারে না, পড়ালেখার মান পড়ে গেছে। স্কুলে শিক্ষকরা জিজ্ঞেস করেন, কী হচ্ছে? সে থাকবে নাকি চলে যাবে?’
নিজ দেশে ফেরার চিন্তায়ই আঁতকে উঠছেন জানিয়ে এসত্রাদা আরো বলেন, ‘সুটকেস গুছিয়ে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সেখানে কী অপেক্ষা করছে ভাবলেই ভয় পাই।’
এসত্রাদা ও তার পরিবারের মতো লাখ লাখ অভিবাসী এখন ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রাসী নীতির মুখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী বহিষ্কার অভিযান চালাবেন তিনি।
তিনি কাগজপত্রহীন অভিবাসী, ভিসার মেয়াদ পার করা কিংবা অস্থায়ী অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ‘অপরাধী’ বলে অভিহিত করে তাদের ফেরত পাঠানোয় জোর দিয়েছেন। এমনকি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের প্রচেষ্টা ও অনিয়মিত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রুদ্ধ করতেও উদ্যোগী হয়েছেন তিনি।
‘ভীষণ বেদনাদায়ক’
এ ছাড়া সম্প্রতি ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যারা স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বে তাদের এক হাজার ডলার দেওয়া হবে।
যদিও তার প্রশাসনের দাবি, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) মূলত অপরাধীদের টার্গেট করে, বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন নয় বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো।
নিউইয়র্ক শহরের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ হুয়ান কার্লোস ডুমাস বলেন, ট্রাম্পের এই নীতির প্রভাব অভিবাসীদের ওপর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার মানসিক প্রভাবের মতোই গভীর।
৬৮ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন মনোচিকিৎসক বলেন, ‘অনিশ্চয়তা, ভয়, উদ্বেগ এসব মানুষকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছে।’
ডুমাস জানান, মানসিক চাপে তরুণদের মধ্যে আত্মক্ষতি, মাদক ও অ্যালকোহলনির্ভরতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘যুবকরা নিজেদের ভয়কে প্রকাশ করে আগ্রাসী আচরণে।
প্রতিটা মানুষ নিজের মতো করে ভয় মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। গত কয়েক বছরে এমন পরিস্থিতি আমরা দেখিনি।’
সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন তারা, যারা বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন ও জীবন গড়ে তুলেছেন। ডুমাস বলেন, ‘এ দেশ ছেড়ে যেতে হবে, এই ভাবনাটাই ভীষণ বেদনাদায়ক।’
তিনি অভিবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা আতঙ্কে ঘরে লুকিয়ে না থেকে বাইরে বেরিয়ে সাপোর্ট নেন। নিউইয়র্ক শহর, যেখানে স্থানীয় পুলিশ আইসিইর সঙ্গে সহযোগিতা করে না, সেখানে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবাই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নয়।’
এফপি/এস এন