সম্প্রতি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে ভারত থেকে পুশ-ইনের ঘটনা বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিজিবি ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের আটক করছে। এইদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়াও রোহিঙ্গা এবং ইউএনএইচসিআরের কার্ডধারী রিফিউজিরাও রয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি কোনও অবৈধ বাংলাদেশি পুশ-ইন হয়, তবে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া মেনে ফেরত পাঠানো হবে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনা চলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ফলাফল আসেনি।
সীমান্তবর্তী জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও খাগড়াছড়িতে পুশ-ইনের ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকা মাদক ও চোরাচালানের জন্য পরিচিত একটি রুট। এর সঙ্গে এবার পুশ-ইনের আতঙ্কও যোগ হয়েছে। আগে থেকেই সীমান্ত এলাকায় জড়ো থাকা লোকজনকে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় মানবপাচার ও চোরাচালানও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মিয়ানমারে সংঘর্ষের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়ে যাওয়া মামুদ উল্লাহ ও রোমানা বেগম দম্পতি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত ৭ মে রাতে ভাওয়ালকুড়ি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের পরিবারের ৫ সদস্যকে পুশ-ইন করেছে।
রোমানা বেগম জানান, প্রথমে তাদের তিন ঘণ্টা গাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং তারপর অনেকদূর হাঁটিয়ে সীমান্ত পার করে দেয়া হয়।
কুড়িগ্রাম-২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সোনাহাট কোম্পানী ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার আইয়ুব হোসেন বলেন, ওই পরিবার দুই ঘণ্টা চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিল, এরপর সারারাত হাঁটে অপরিচিত জায়গায়। পরে খবর পেয়ে তাদের আটক করা হয়।
কুড়িগ্রামের সাত উপজেলার সঙ্গে ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। এই অংশে স্থল ও নদীপথে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার নেই। চলতি মাসে ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ভারতে থাকা ৩৬ রোহিঙ্গাসহ ৪৪ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ।
একজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, তিনি সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৩০-৪০ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখেছেন, যারা তাদের বাড়ি কোথায় তা বলতে পারেনি। আরেকজন বলেন, ভারত থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং এর প্রভাব নিয়ে তারা শঙ্কিত।
চলতি মাসে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৭০ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি দিয়ে ৭৩ জন, কুড়িগ্রামে ৪৪ জন, সিলেটে ২৩ জন, ঝিনাইদহে ২২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭ জন, মৌলভীবাজারে ১৫ জন, পঞ্চগড়ে ১১ জন এবং চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ১০ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ভারত থেকে পুশ-ইনের মাধ্যমে আসাদের মধ্যে যদি বাংলাদেশি থাকে তবে তাদের পুশ ব্যাক করার সুযোগ নেই। তবে ভারতের নাগরিক এবং রোহিঙ্গারা থাকলে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া মেনে ফেরত পাঠানো হবে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্ত অনেক বিস্তৃত হওয়ায় সব জায়গায় পাহারা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই আনসার বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে এবং জনগণেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। টহল জোরদার করার মাধ্যমে সীমান্ত ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এসএস/এসএন