হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তাকে গ্রেপ্তারের পরদিন আজ সোমবার ঢাকার একটি আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আগামী ২২ মে শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে এমন সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের এই গ্রেপ্তারকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এক ভয়ংকর সংকেত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে তার বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল? তার অপরাধ কী ছিল? শুধুমাত্র ‘মুজিব’ বায়োপিকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার কারণে? এটি মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং এই ধারণা তৈরি করছে যে বাংলাদেশ ২.০-তে যে কেউ গ্রেপ্তার হতে পারে, যদি ক্ষমতাসীনরা মনে করে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি শেখ হাসিনার আগের সরকারের চেয়ে বড় কর্তৃত্ববাদী সরকার হয়ে উঠছে? যা দেখা যাচ্ছে, তারা পূর্ববর্তী সরকারের মতোই প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং তুচ্ছ বলে মনে হচ্ছে, যখন তাদের ঐক্যবদ্ধ এবং পুনর্মিলনকারী শক্তি হওয়ার কথা ছিল।’
সায়ের শেষ পর্যন্ত দাবি করেন, “ফারিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তার হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটি অগ্রহণযোগ্য। কোনো ‘যদি’, ‘কিন্তু’ নেই।”
অন্যদিকে, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করা নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার গভীর উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এখন নৈতিক ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় হিমশিম খাচ্ছে। আমরা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি যেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক হওয়া কিংবা দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকটাই কাউকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে এমন ব্যক্তিরা এখন আর নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। কারণ, ভিত্তিহীন অভিযোগে যেকোনো সময় গ্রেপ্তারের আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠেছে। দেশের নতুন তথাকথিত ‘সিভিল সোসাইটি’ এখন আর সুবিচার বা ন্যায্য প্রক্রিয়া নিয়ে মাথা ঘামায় না, তারা প্রতিশোধ নেওয়ার মনোভাবেই ব্যস্ত।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘এটি ন্যায়বিচার নয়। দায়বদ্ধতার পোশাক পরে হাজির হওয়া প্রতিশোধ। এটি আইনের শাসনে বিশ্বাসী যেকোনো মানুষের জন্যই ভয়াবহ সংকেত, তারা যে আদর্শেই বিশ্বাস করুক না কেন।’
এর আগে সকালে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
১৮ মে সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। গেল ২৯ এপ্রিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নুসরাত ফারিয়া ও ১৬ জন শিল্পীর নাম একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলার বাদী এনামুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০০-৪০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন।
এমআর/টিএ