শিক্ষায় জিডিপির ৬% বরাদ্দসহ মোট ২০ দফা দাবি

গবেষণাবান্ধব ও শিক্ষাকেন্দ্রিক বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি তুলেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

রোববার (২৫ মে) সকাল ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুরের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষা বাজেট পেশ করেন এবং ২০ দফা দাবি তুলে ধরেন।

২০ দফা দাবিগুলো :

১. গবেষনাবান্ধব শিক্ষামূলক বাজেট প্রদান করতে হবে।

২. দেশের সব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।

৩. নৈতিকতা সমৃদ্ধ জাতিগঠনে শিক্ষার সর্বস্তরে কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. প্রাথমিক স্তরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকল্পে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।

৫. শিশুদের জন্য পাঠদানকে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান নিশ্চিতকল্পে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বরাদ্দ প্রদান।

৬. কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।

৭. একটি আন্তর্জাতিক মানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।

৮. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভার কমাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

৯. শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণগ্রহণ ব্যবস্থা চালু ও তা সহজলভ্য করতে হবে।

১০. নারী শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

১১. দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্টিনে খাবার মান বৃদ্ধি ও হলে যথাযথ সিট ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে বরাদ্দ দিতে হবে।

১৩. কওমি মাদ্রাসার তাকমিল (মাস্টার্স) সার্টিফিকেটকে সাধারণ মাস্টার্সের সার্টিফিকেটের মতো সমমানের মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১৪. কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দেশে ও দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

১৫. আলিয়া শিক্ষার অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।

১৬. প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কামিল মাদ্রাসার স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।

১৭. প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বেশি বাজেট প্রদান করতে হবে।

১৮. মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।

১৯. মুখস্থ নির্ভর ও সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

২০. গণমানুষের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিতকল্পে চিকিৎসক তৈরিতে প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হবে ও তাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

খাতভিত্তিক প্রস্তাবনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষার জন্য ২০ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত না হওয়া রাষ্ট্রের বড় ব্যর্থতা। এখনো প্রতি ৪ জনে একজন নিরক্ষর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৮,৮১৯ কোটি টাকা। নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়তে এই বরাদ্দ কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা :

দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য এই শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১৭.২ শতাংশ এবং শিক্ষিত বেকার ৪৭শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১,৭৮৩ কোটি টাকা। আমরা এ খাতে বরাদ্দ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় :

গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অভ্যন্তরীণ আয়ের নামে বেতনবৃদ্ধি ও কৃচ্ছতা সাধনের নামে সুযোগ-সুবিধা হ্রাস বন্ধ করতে হবে। বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ গবেষণায় বরাদ্দ দিতে হবে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় :

বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই মানসম্মত শিক্ষা, রয়েছে শিক্ষক সংকট ও অনিয়ম। ১১৬টির মধ্যে ৯০টির কার্যক্রম অনুমোদিত, কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলনায় সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। সরকারিভাবে নজরদারি এবং আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় :

দেশের বৃহৎ এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, অথচ শিক্ষার্থী পিছু বার্ষিক ব্যয় মাত্র ৭০২ টাকা, যা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং অসম। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলার শামিল। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

কওমি মাদ্রাসা :

দেশে ১৯ হাজারের বেশি কওমি মাদ্রাসায় প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকলেও কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কওমি শিক্ষার্থীদের জাতীয় ধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে এবং কারিগরি শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে বাজেটে ন্যূনতম ১০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানানো হচ্ছে।

আলিয়া মাদ্রাসা :

শতবর্ষী আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামো এখনও দুর্বল। মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানানো হচ্ছে।

মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ :

গবেষণা, ল্যাব উন্নয়ন, ইন্টার্ন ভাতা, আবাসন, নিরাপত্তা, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। মেডিকেলে মানবিকতা ও ইসলামি মূল্যবোধভিত্তিক পৃথক কোর্স চালু করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন ফান্ড’ গঠনের দাবি জানানো হচ্ছে।

ল কলেজ :

বিচার বিভাগ উপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও ইসলামি আইনসংক্রান্ত কোর্স যুক্ত এবং বার কাউন্সিল উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান :

দেশে বছরে ২০-২২ লাখ নতুন কর্মক্ষম মানুষ যুক্ত হলেও চাকরির সুযোগ অপর্যাপ্ত। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়িয়ে, ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্পে জামানতবিহীন ঋণ এবং নারীদের জন্য কুটির শিল্প ও নিরাপদ পরিবেশে কাজের সুযোগ তৈরিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি করা হচ্ছে।

বেকারত্ব নিরসন ও সামাজিক নিরাপত্তা :

দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ বেকার এবং ৩.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। শিক্ষিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

আমরা, শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে প্রস্তাবিত বাজেটের ২০ শতাংশ বা মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এবারের বাজেট হোক সততা, দক্ষতা ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ জাতি গঠনে গবেষণাবান্ধব শিক্ষামুখী বাজেট।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ মিশকাতুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান হুসাইন নূর, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হোসাইন ইবনে সরোয়ার, দাওয়াহ ও দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ ইবরাহীম খলিল, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক এস এম কামরুল ইসলাম, যোগাযোগ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ইউসুফ পিয়াস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক উবায়দুল্লাহ মাহমুদ, কওমি মাদ্রাসা সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ ইমাম মাহদী।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সোমবার থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা May 25, 2025
পপি নায়িকা না হলে কেউ চিনত না: ওমর সানী May 25, 2025
img
কুষ্টিয়া-৩ (সদর)আসনে জামায়াতের এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন আমীর হামজা May 25, 2025
img
ভাঙল ১৭ বছরের সংসার, নতুন প্রেমে ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ অভিনেত্রী May 25, 2025
img
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে আশাবাদী সাবেক নির্বাচক হান্নান May 25, 2025
img
পড়ে গিয়ে একসঙ্গে দু'হাত ভাঙলেন অভিনেত্রী নন্দিনী May 25, 2025
img
পদত্যাগ করলেন ঢাবির মাস্টারদা সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট May 25, 2025
img
লাহোরের ফাইনাল স্কোয়াডে রিশাদ, জায়গা হয়নি সাকিবের May 25, 2025
img
সায়রা বানুর কাছে যাওয়ার আগে এক প্লেট পেঁয়াজ খেতেন অভিনেতা! May 25, 2025
img
বৃষ্টির সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়ার আভাস May 25, 2025
বিয়ের পর থেকেই সাফল্যের জোয়ারে ভাসছেন মেহজাবীন May 25, 2025
সন্দীপ রেড্ডি নতুন সিনেমায় নেই দীপিকা! প্রভাসের বিপরীতে কে? May 25, 2025
ভুয়া ফলোয়ার দিয়ে কোটিপতি এমবাপ্পে! May 25, 2025
হাসানের মৃত্যুতে সারজিসের ক্ষোভ, কালপ্রিটদের বিচার দাবি May 25, 2025
img
দুই প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিলো বিশ্বব্যাংক May 25, 2025
img
ভারতীয় উপকূলে ডুবল ৬৪০ কনটেইনারের জাহাজ May 25, 2025
img
আইপিএল ধারাভাষ্যে আয়ের দিক থেকে কে এগিয়ে? May 25, 2025
img
সমঝোতার আহ্বান, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে এবি পার্টি May 25, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতা যোগ দিলেন ছাত্রদলে May 25, 2025
img
এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে নাগরিকের কাছে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা থাকবে : হাসনাত May 25, 2025