ফোনে কাঁদছেন ছোট পর্দার ডাকসাইটে খলনায়িকা নন্দিনী চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি, বড় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। জিমে ‘জাম্পিং বক্স’-এর কসরত করতে গিয়ে দুটো হাতেরই কব্জি সকেট বল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর টানা অনেক দিন দুই হাত স্ট্রিং ব্যাগে ঝুলিয়ে গৃহবন্দি। অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। হাতের ব্যথা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। একটু ভাল হয়েই সাহানা দত্তের নতুন হিন্দি ধারাবাহিক ‘নয়নতারা’তে অভিনয় করছেন। অভিনয়সূত্রে বলিউডে। সেখান থেকেই আনন্দবাজার ডট কমের ফোনে সাড়া দিয়েছেন।
কণ্ঠে দলাপাকানো কষ্ট। “আমার অবস্থা যেন গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না! ধারাবাহিকে এক ধারার চরিত্র। বড় পর্দায় ভাল চরিত্র পাব, কিছু পরিচালক হয়তো আমার কথা ভাববেন— ভেবেছিলাম। সে সব কিচ্ছু হল না।” অনেক অভিমান নিয়ে তাই বাংলা ছেড়েছেন। পঞ্চাশ পেরিয়ে বলিউডে নতুন করে ভাগ্য যাচাই করছেন! ভেজা গলায় জানালেন অভিনেত্রী।
‘নয়নতারা’ ধারাবাহিক দিয়ে অর্জুন চক্রবর্তীও বলিউডে পা রাখলেন। সে কথা জানাতেই নন্দিনীর মত, “আগে হিন্দি কাজ করেছি। শ্যাম বেনেগালের ‘বোস দ্য ফরগটেন হিরো’, সুশান্ত দাসের ‘রিস্তোঁ কা মঞ্ঝা’, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ঝনক’, বালাজি অল্টের একটি সিরিজ়ে অভিনয় করেছি। তবে সবগুলোই কলকাতা থেকে। বলিউডে গিয়ে কাজ এই প্রথম।” ‘আশালতা’ চরিত্রটি তাঁকে আশা জুগিয়েছে। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, এই চরিত্রটিও ধূসর। এক পুরুষের হাতে এক নারীর লাঞ্ছিত, অপমানিত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনি। কিন্তু এতে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি।
কেমন লাগছে বলিউড, সত্যিই মায়ানগরী? “তা হলে একটা ঘটনা বলি। এখানে আমায় শূন্য থেকে শুরু করতে হচ্ছে। কেউ চেনেন না। আমিও কাউকে চিনি না। ফলে, অডিশন দিচ্ছি। একটি অভিনেতা নির্বাচক সংস্থা অডিশনের শেষে নিজেকে নিয়ে বলতে বলল।” সে দিন প্রথম থমকেছিলেন নন্দিনী। “নিজের কথা বলতে গিয়ে বলতে হয়েছে, বাংলায় দীর্ঘ দিন অভিনয় করছি। তার পরেও পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারিনি! আমায় এক ডাকে কেউ চেনে না। এখনও অভিনয় দুনিয়ায় ‘স্ট্রাগলার’!”, বলতে বলতে সে দিন কেঁদে ফেলেছিলেন অভিনেত্রী। অদ্ভুত যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছিলেন। অডিশন শেষে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছেন। এক অভিনেতা নির্বাচক তাঁকে দাঁড় করিয়েছিলেন। যোগাযোগ নম্বর নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, শীঘ্রই হয়তো তিনি নন্দিনীকে ডাকবেন। “মনে হল, পৃথিবীতে সবাই খারাপ নন”, শ্বাস ফেলে দাবি নন্দিনীর।
বলিউড এখনও তাঁর দোসর হয়ে উঠতে পারেনি। সাহানা কলকাতার প্রযোজক। তাঁকে চেনেন। তাই ‘নয়নতারা’য় সুযোগ দিয়েছেন। বাকিরা তাঁকে চেনেন না। তাই এক এক সময় মনে হয়েছে, বলিউড ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসবেন।
“পরক্ষণেই মনে হয়েছে, হেরে যাব?”, ফিরে আসেননি নন্দিনী। আরও অভিমান রয়েছে তাঁর। গোয়ায় গিয়ে বিকিনি পরেছিলেন। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেওয়ায় বঙ্গবাসী প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল। “আমার বেশ কিছু ভাল বিজ্ঞাপনী ছবি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। সাহসিকতার মাশুল গুনতে হয়েছে”, আফসোস অভিনেত্রীর। এখন মনে হয়, ছবিগুলো সমাজমাধ্যমে না দিলেই পারতেন। বাংলা এখনও সাহসিকতার কদর করতে জানে না।
টিকে/টিএ