ফরিদপুরে সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পপতি এ কে আজাদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মহনগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফাসহ (৫৫) বিএনপির ১৬ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
হামীম গ্রুপের ল্যান্ড হেড কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাফিজুল খান (৪০) বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলা গ্রহণ করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার এস আই আহাদউজ্জামান বলেন, গত বৃহস্পতিবার এ কে আজাদের বাড়িতে সংঘটিত হামলার ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বর্তমানে বাইরে আছেন। তিনি (ওসি) এলে বিষয়টি তাকে অবগত করা হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের শহরের ঝিলটুলীস্থ অফিস কাম বাসভবনে কর্মরত ছিলেন।
সে সময় তার সঙ্গে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড মো. মেহেদী হাসান, কেয়ারটেকার মো. জালাল শেখ, পরিচ্ছন্ন কর্মী আব্দুল হান্নান, গৃহপরিচারিকা মাজেদা বেগম, সিসিটিভি অপারেটর সেলিম হোসেন ও সহকারী শাওন শেখ উপস্থিত ছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, ওই সময়ে একদল উগ্র সন্ত্রাসী হঠাৎ বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড মো. মেহেদী হাসানকে খুন জখমের হুমকি দিয়ে এ কে আজাদের বাসায় প্রবেশ করে ত্রাস সৃষ্টি করেন। তারা বাড়ির ভেতর ঢুকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেতে থাকেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, তিনি (রাফিজুল) আসামিদের গালাগালি শুনে কক্ষ থেকে বের হয়ে উঠানে আসার সঙ্গে সঙ্গে গোলাম মোস্তফা হুমকি দিয়ে বলেন, 'তোর স্যার এ কে আজাদ যেন ফরিদপুর না আসে। যদি আসে তা হলে তাকে হত্যা করে মরদেহ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেব।' গোলাম মোস্তফাসহ অন্য আসামিরা আরও হুমকি প্রদান করে, এ কে আজাদের বাড়ি, ঘর, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যা আছে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেবো। জনসেবা করার স্বাদ মিটিয়ে দেবো।
এতে বলা হয়, পরে আসামিরা ‘এ কে আজাদের চামড়া তুলে নিবো আমরা’ সহ বিভিন্ন প্রকার প্রাণনাশক ও অরাজক উক্তির স্লোগান দিতে দিতে জনমনে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এজাহারে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাহরিয়ার হোসেন (৩৮), কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান চৌধুরী (৫৬), মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান (৫৫), মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম (৪৪), মহানগর ছাত্রদল সহসভাপতি ক্যাপ্টেন সোহাগ (৪০) প্রমুখ।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের গোপন সভা হচ্ছে, এ তথ্য পেয়ে আমরা গিয়েছিলাম। ওখানে আমি নিজে কিংবা আমার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা কেউ কোনো হুমকিধমকি দেননি। একটি ঢিলও ছোড়া হয়নি। তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ করতেই পারে তবে তা তাকে প্রমাণ করতে হবে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. এম এ জলিল বলেন, অভিযোগটির কথা শুনেছি। এটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের সত্ত্বাধীকারী এ কে আজাদের ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীস্থ বাস ভবনে চড়াও হন মহানগর বিএনপি, মহানগর ছাত্রদল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। ‘এ কে আজাদের বাড়িতে গোপন বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ’-এমন অভিযোগ এনে ওই বাড়িতে চড়াও হন তারা।
আরআর/টিএ