সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই সারাদেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাক আসে। এই কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে শিক্ষার্থীদের এই গণ-অবরোধ কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে জনজীবন, বিশেষ করে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ‘বাংলা ব্লকেড’-এর নামকরণ প্রসঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সারজিস আলম। তিনি জানান, আন্দোলনের ধরন ছিল অবরোধ হলেও তারা সচেতনভাবে ‘অবরোধ’ বা ‘হরতাল’-এর মতো গতানুগতিক শব্দ ব্যবহার করতে চাননি। কারণ এসব শব্দ বাংলাদেশের মানুষের কাছে জ্বালাও-পোড়াও বা রাজনৈতিক সহিংসতার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
সারজিস বলেন, “আমরা শুরুতে ভাবছিলাম, আমরা তো অবরোধই করতে যাচ্ছি, কিন্তু এই শব্দটা তো আর ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের নতুন কিছু একটা বলতে হবে। তখন চিন্তা করলাম—বাংলাদেশ জুড়ে যদি অবরোধ করি, তাহলে ‘বাংলাদেশ ব্লকেড’ বলা যায় কি না। কিন্তু সেটা উচ্চারণে সময় লাগে বেশি। তখন এক পর্যায়ে প্রস্তাব এল—‘বাংলা ব্লকেড’। নামটা এককথায় বলার মতো, মনে দাগ কাটার মতো এবং এর মধ্যে একধরনের গাম্ভীর্য ও সাহসিকতা আছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই শব্দটা কেবল আন্দোলনের কৌশল বোঝাত না, এটি আমাদের তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। আমরা যারা নেতৃত্বে ছিলাম, তারা চেয়েছিলাম এমন একটি শব্দ বেছে নিতে যা ভিন্নধর্মী, আধুনিক এবং একইসঙ্গে আন্দোলনের চরিত্র তুলে ধরবে। ‘বাংলা ব্লকেড’ তাই শুধু একটি শব্দ নয়, এটি ছিল ছাত্র-জনতার সম্মিলিত এক প্রতিবাদের রূপ।”
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সাধারণত বিকেল ৪টার পর শুরু হতো। সারজিস জানান, “আমরা দেখেছি, অফিস শেষ করে অনেক মানুষ যানজটে বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটি আন্দোলনটাকে একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিয়েছিল। বাংলা ব্লকেড ছিল সেই ঐক্য ও সাহসের প্রতিচ্ছবি।”
এমআর/টিকে