সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর গোপালগঞ্জের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (০৭ জুলাই) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত।
এর আগে জানা যায় যে, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ‘ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে’ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ও তার স্বজন ও এবং পরিচিতজনদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা হওয়ার কথা ওই সময় জানিয়েছিলেন সংস্থাটির উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।
এর মধ্যে একটি মামলায় শুধু লিকুই আসামি। আরেকটি মামলায় স্ত্রী রহিমা আক্তার আসামি। আরেক মামলায় লিকু ও তার ভগ্নিপতি শেখ ইকরামকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অপর মামলাটিতে লিকুসহ ১০ জনকে আসামি তালিকায় রাখা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন-লিকুর স্ত্রী রহিমা আক্তার, শেখ মো. ইকরাম, গাজী মুস্তাফিজুর রহমান দিপু, তানভীর আহম্মেদ, মো. লিয়াকত হোসেন সবুজ, মো. কালু সেখ, হামিম শেখ, মিন্টু রহমান ও মো. আরাফাত হোসেন। এ মামলায় লিকু ও পরিচিতজনদের নামে এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৩টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১৪৪ কোটি ৫৯ লাখ ১৩ হাজার ১০ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানায় দুদক।
লিকুসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটিতে অভিযোগ আছে তার স্ত্রী রহিমার ‘ঘুষ-দুর্নীতির’ মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির উৎস আড়াল করতে নয়টি ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৬ টাকা স্থানান্তর ও হস্তান্তরে সহায়তা করেছেন।
লিকুর ভগ্নিপতি শেখ মো. ইকরাম একইভাবে তিনটি ব্যাংক হিসাবে ২১ কোটি ৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৭ টাকা স্থানান্তর ও হস্তান্তরে সহায়তা করেছেন। এজাহারে বলা হয়, লিকুর ভাই গাজী মুস্তাফিজুর রহমান দিপুও চারটি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬৩ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে লিকুর অবৈধ সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তরে সহায়তা করেছেন। লিকুর মামা তানভীর আহম্মেদ দুটি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি ৮৮ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৪ টাকার লেনদেন করে লিকুকে সহায়তা করেছেন। ব্যবসায়িক অংশীদার মো. লিয়াকত হোসেন সবুজ দুটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার ২৬৩ টাকা লেনদেন করে লিকুকে সহায়তা করেন।
আরেক ব্যবসায়িক অংশীদার মো. ফালু সেখ তিনটি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ৫৬ কোটি ৫২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪৯ টাকা লেনদেন করে লিকুকে সহায়তা করেছেন। তার বাসার তত্ত্বাবধায়ক হামিম শেখ চারটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৭ টাকা লেনদেন করে তাকে সহায়তা করেছেন।
লিকুর ম্যানেজার মিন্টু রহমান একটি ব্যাংক হিসাবে ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৪৮৬ টাকা লেনদেন করে আসামি হয়েছেন। মামলার আরেক আসামি মো. আরাফাত হোসেন তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৪ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে লিকুকে সহায়তা করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু লিকুর নামে দুদকের মামলাটিতে ৫৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৮০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। লিকুর ভগ্নিপতি শেখ মো. ইকরামের বিরুদ্ধে মামলায় ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ টাকা মূল্যের সম্পত্তি ভোগ দখলের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক এপিএস লিকুর স্ত্রী রহিমা আক্তারের মামলায় ২৩ কোটি ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৮ টাকা মূল্যের সম্পত্তি ভোগদখলে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদক বলছে, এই সম্পত্তি অর্জনের বিপরীতে তিনি বৈধ আয়ের উৎস সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদি কিংবা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
ইউটি/এসএন