বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত রাজধানী ঢাকাকে স্বস্তি দিতে এক উচ্চাভিলাষী পরিবহন প্রকল্প হাতে নিলো সরকার। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু করা হবে ৪০০টি বৈদ্যুতিক বাস। লক্ষ্য, পরিবহন খাতে দূষণ কমানো ও পুরনো ডিজেলচালিত বাসগুলো ধাপে ধাপে সরিয়ে ফেলা।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইডকল। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাসগুলো লিজে পাবে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো। প্রাথমিক পর্যায়ে পূর্বাচল ও কাঁচপুরে দুটি চার্জিং ডিপো নির্মাণ করে নির্দিষ্ট কিছু রুটে বাস চালানো হবে। ডিটিসিএ’র কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন ইতোমধ্যে মিলেছে, একনেকের অনুমোদন পেলেই প্রকল্প শুরু হবে। লক্ষ্য, পাঁচ বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করা, এর মধ্যে প্রথম দুই বছরেই রাস্তায় নামবে বাসগুলো।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল বাস চালু করলেই হবে না, এই উদ্যোগ টেকসই করতে প্রয়োজন শক্তিশালী নীতিমালা, চার্জিং অবকাঠামো এবং বেসরকারি খাতকে যথাযথ উৎসাহ দেওয়া। বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাস আমদানিতে ৫৮ শতাংশের বেশি শুল্ক থাকায় উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। যেখানে ডিজেলচালিত বাসে শুল্ক ১৫–৩৭ শতাংশ। এ বিষয়ে বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘সরকার যদি ইভি নীতিতে পরিবর্তন না আনে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% ইভি ব্যবহারের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না’।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ঢাকায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার গড় মাত্রা ৯০ থেকে ১০০ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের কারণে ২০১৯ সালে দেশে মারা গেছেন ১ দশমিক ৬ লাখ মানুষ, পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জিডিপির প্রায় ৮ শতাংশ।
এই সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০২৫ সাল থেকে ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে, যার বাজেট ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২৯০ মিলিয়ন দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। পরিবহন খাতে দূষণ কমানো এবং বাতাসের মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই নেয়া হয়েছে বহুমাত্রিক এই পরিকল্পনা।
এসএন