লোককথা আর ভয়—এই দুইয়ের মেলবন্ধন যুগে যুগে বুনেছে অজানা আতঙ্কের গল্প। ভারতীয় সিনেমা ও ওয়েব দুনিয়ায় সেই পুরনো বিশ্বাস, গ্রাম্য সংস্কার আর মিথকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এমন কিছু ভৌতিক ছবি, যেগুলো শুধু ভয়ই নয়, জাগিয়ে তোলে সংস্কৃতির গা ছমছমে অতীত। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাগুলো একদিকে যেমন বিনোদনের দিক থেকে অনন্য, তেমনই অন্যদিকে দর্শককে নিয়ে যায় লোককথার ঘোর লাগা জগতে।
মারাঠি লোককথার ভিত্তিতে নির্মিত তুম্বাড় ছবিটি ‘লোভ’ আর ‘অভিশপ্ত গ্রাম’ ঘিরে তৈরি এক অতল রহস্যের গল্প। এক বিস্মৃত দেবতার উপস্থিতি আর দুর্দান্ত সিনেম্যাটোগ্রাফি মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে আধুনিক ভারতীয় হরর ঘরানার অনন্য নিদর্শন।
ছোরি নামের হিন্দি হরর থ্রিলারে রয়েছে গর্ভবতী এক নারী, ভয়াল এক গ্রাম আর নারীর নিঃস্ব হওয়ার গল্প। গ্রামীণ সমাজের সংস্কার আর নারীঘটিত আঘাত মিশে এই ছবিকে দিয়েছে আলাদা গা ছমছমে মাত্রা।
কালী খুঁই ছবিটি পাঞ্জাবের এক অভিশপ্ত গ্রামে নারী হত্যার পেছনের ভয়াল অতীত তুলে ধরেছে। লোকজ সংস্কৃতি আর সামাজিক বার্তা—দুটোই একসঙ্গে গল্পে মিশে তৈরি করেছে গভীর এক অভিজ্ঞতা।
ভূতকালাম মালয়ালম ভাষার এক মনস্তাত্ত্বিক হরর, যেখানে প্রজন্মগত ট্রমা আর সমাজের চাপ একাকার হয়ে যায় স্থানীয় বিশ্বাসের সঙ্গে। শব্দের চেয়ে নিরবতা যেভাবে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে, তার এক নিখুঁত উদাহরণ এই ছবি।
বেতাল নামের ওয়েব সিরিজে উপনিবেশিক যুগের প্রেতাত্মা ব্রিটিশ সৈন্যদের ঘিরে এক জোম্বি গল্প ফুটে উঠেছে। ভারতীয় পুরাণ আর উপনিবেশিক ইতিহাসের অদ্ভুত মিশ্রণ এটিকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
আর লাপাছাপি ছবিটি ছোরি নির্মাণের আগের এক মারাঠি ছবি, যেখানে গ্রামীণ রীতিনীতি আর লোককথা মিলে তৈরি হয়েছে এক ভয়াল গল্প। প্রথা আর ভয়ের এমন চিত্রায়ণ সচরাচর দেখা যায় না।
এই ছবিগুলো শুধু ভয়ই দেখায় না, বরং ফিরিয়ে আনে সেইসব মিথকে, যেগুলো হয়তো বহুদিন আগেই বিস্মৃত হয়েছিল। লোকজ সংস্কৃতি, বিশ্বাস আর ইতিহাসের মিশ্রণে নির্মিত এই ছবিগুলো ভারতীয় হরর ঘরানাকে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়।
এফপি/টিএ