বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ২০২৪ সালের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টেকসই আর্থিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসনমূলক (ইএসজি) মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এ মূল্যায়নে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রমের টেকসই দিক দিয়ে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।
এবারের তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংক— ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক— আগের বছরের র্যাংকিংয়েও অবস্থান ধরে রেখেছিল।
তবে ২০২৩ সালের তালিকায় থাকা এক্সিম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এবং উত্তরা ব্যাংক এবারে বাদ পড়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স টানা দ্বিতীয় বছরের মতো টেকসই প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান ধরে রেখেছে, যা তাদের ধারাবাহিক পরিবেশবান্ধব ও সমাজমুখী কার্যক্রমেরই প্রমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি মূল সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে। এই সূচকগুলো হলো:
১. টেকসই অর্থায়ন সূচক
২. কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম
৩. পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন
৪. মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সূচক, এবং
৫. ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃতি।
এই সূচকগুলোর মধ্যে মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সূচক এবং ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃতি সূচক সম্মিলিতভাবে মোট নম্বরের প্রায় ৬০ শতাংশ ওজন বহন করে।
মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সূচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়: নিট খেলাপি ঋণের হার, প্রথম স্তরের মূলধনের পরিমাণ (টায়ার-১ মূলধন), ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত, প্রভিশন বা সংরক্ষিত তহবিলের স্থিতি, সিএমএসএমই (ক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র) খাতে ঋণের অংশ এবং বড় ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড।
অন্যদিকে, ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃতি সূচকে মূল্যায়ন করা হয়: ব্যাংকের শাখা নেটওয়ার্ক, আমানত ও ঋণের হিসাব সংখ্যা এবং এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার পরিধি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো এই টেকসই রেটিং পদ্ধতি চালু করে।
এর মূল লক্ষ্য ছিল— ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসন (ইএসজি) বিষয়ের প্রতি আরো দায়বদ্ধ করে তোলা এবং টেকসই অর্থনীতির পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করা। এই প্রতিবেদন কেবল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে না, বরং দেশের আর্থিক খাতে একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কাঠামো গড়ার পথনির্দেশও দেয়।
আরআর