বিশ্বের সর্বোচ্চ গতির ইন্টারনেট উদ্ভাবন করে নতুন প্রযুক্তিগত দিগন্তে প্রবেশ করল জাপান। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (NICT) সম্প্রতি ১.০২ পেটাবাইট পার সেকেন্ড (Pbps) গতিতে ডেটা স্থানান্তরের সক্ষমতা অর্জন করেছে—যা বর্তমান বিশ্বের যেকোনো ইন্টারনেট গতিকে বহু গুণে ছাড়িয়ে গেছে।
একটি তুলনা দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়—যুক্তরাষ্ট্রের গড় ব্রডব্যান্ড গতি যেখানে মাত্র ৮৩ Mbps, সেখানে জাপানের এই গতি তার চেয়ে প্রায় ৪০ লাখ গুণ বেশি। আর ভারতের তুলনায় এটি ১ কোটি ৬০ লাখ গুণ দ্রুত। এই স্পিডে নেটফ্লিক্সের পুরো ভিডিও লাইব্রেরি বা ইউটিউবের সকল ভিডিও ডাউনলোড করা যাবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে।
NICT তাদের পরীক্ষায় যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, সেটি চার-কোর অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তি। প্রতিটি কোর আলাদা আলাদা আলোকচ্যানেল ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণ করে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, এই গতি অর্জনে কোনও ব্যয়বহুল উপাদান ব্যবহৃত হয়নি—বরং প্রচলিত ফাইবার কেবলের মাধ্যমেই এই বিপ্লব ঘটানো হয়েছে। অর্থাৎ, বর্তমান অবকাঠামোতেই এই প্রযুক্তি সহজেই প্রয়োগযোগ্য, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আশার আলো।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ভবিষ্যতে এই ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে এআই, ক্লাউড গেমিং, রিমোট মেডিকেল সার্ভিস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও ৮কে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের মতো খাতে। যেমন, একটি ২০০ জিবির ভার্চুয়াল গেম যেটি বর্তমানে কয়েক ঘণ্টা সময় নেয় ডাউনলোড হতে, তা এই নতুন প্রযুক্তিতে সম্পন্ন হবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ গতি শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণা, জলবায়ু বিশ্লেষণ ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। এটি শুধু একটি রেকর্ড নয়, বরং তথ্যপ্রযুক্তির জগতে মানবজাতির জন্য এক যুগান্তকারী দিগন্ত উন্মোচন। গবেষণাগারে সফল এই প্রযুক্তি আগামী দশকের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
সম্ভবত খুব শিগগিরই ‘লোডিং’ শব্দটি আমাদের প্রযুক্তি অভিধান থেকে মুছে যাবে। কারণ ইন্টারনেট তখন সত্যিকার অর্থেই হবে আলোর গতিতে।
এফপি/টিএ