কাঠ, ধাতু, দেয়াল মসৃণ করার কাজে ব্যবহৃত শিরিশ কাগজের আমদানি মূল্য কম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি কিংবা আমদানির আড়ালে অর্থপাচার করা হচ্ছে কি-না, তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্থাটিকে।
সোমবার (২১ জুলাই) এ সংক্রান্ত রিটে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনছুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য পর্যালোচনা করে দেশে শিরিশ কাগজের বাজার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। বাণিজ্যসচিব, অর্থসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএফআইইউ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শিরিশ কাগজ আমদানিতে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা। এসব প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে গত ১৮ মে বিবাদীদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়।
শিরিশ কাগজ আমদানিতে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয় নোটিশে। জবাব না পেয়ে গত ২২ মে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী নাঈম সরদার অয়ন।
আইনজীবী পল্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা শিরিশ কাগজ আমদানিতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আমদানির আড়ালে অর্থপাচার করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা মিললে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আদালত জনস্বার্থ বিবেচনা করে রিটে রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।’
বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রিটে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে গত ১০ বছরে শিরিশ কাগজের দাম পাঁচ গুণ বেড়েছে। অথচ আরিস্তা বাংলাদেশ, আহনাফ ট্রেডিং, অ্যাব্রেসিভ সলিউশন, খাজা ট্রেডার্স, এআরজেড ট্রেডার্স, মাসউদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, এশা ট্রেডিংসহ কিছু প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণায় শিরিশ কাগজ আমদানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৩ সালের কাস্টমস আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য পর্যালোচনা করে আমদানি করা শিরিশ কাগজে শুল্ক আরোপ করা কথা। কিন্তু বিবাদীরা আইন অনুযায়ী তা করছেন না। ফলে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে আমদানির আড়ালে টাকা পাচারের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা জনস্বার্থ পরিপন্থী।
এসএন