এই যুদ্ধবিরতি টেকসই নয়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ইরান প্রস্তুত: পেজেশকিয়ান

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ইরান প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যদি নতুন করে যুদ্ধ শুরু করে, তাহলে ইরান সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

একইসঙ্গে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বর্তমান যুদ্ধবিরতি বেশিদিন টিকবে না বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (২৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আল জাজিরাকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। বুধবার এই সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়। গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের ভয়াবহ সংঘাত শেষ হওয়ার পর এটিই ছিল তার প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকার।

ওই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।

এদিকে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের এই বক্তব্য এমন সময় এলো যখন পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। যদিও বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রত্যাশিত মাত্রায় ক্ষতি হয়নি।

পেজেশকিয়ান বলেন, “ইসরায়েল যদি আবারও হামলা চালায়, তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি এবং প্রয়োজনে ইসরায়েলের ভেতরে গিয়েও হামলা করতে পারব।”

তিনি বলেন, “এই যুদ্ধবিরতিকে আমরা টেকসই বলে মনে করি না। তাই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমাদের সেনাবাহিনী প্রস্তুত। ইসরায়েল আমাদের ক্ষতি করেছে, আমরাও তাদের গভীরে গিয়ে আঘাত করেছি। তবে তারা তাদের ক্ষতির পরিমাণ গোপন করছে।”

তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন এবং স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল ইরানের নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া। তবে সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

গত জুনে ১২ দিনের সংঘাতে ইরানে ৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সাধারণ নাগরিক। অপরদিকে, ইসরায়েলে নিহত হন কমপক্ষে ২৮ জন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ২৪ জুন।

পেজেশকিয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তবে সেটি হবে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই। তিনি বলেন, “(মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড) ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়— আমরা সেটি মেনে নিচ্ছি, কারণ আমরাও পারমাণবিক অস্ত্রের বিরোধিতা করি। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, মানবিক এবং কৌশলগত অবস্থান।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কূটনীতিতে বিশ্বাসী, তাই ভবিষ্যৎ আলোচনায় দুই পক্ষের জন্য লাভজনক সমাধান হতে হবে। হুমকি বা একতরফা শর্ত আমরা মানি না।”

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শেষ হয়ে গেছে বলে ট্রাম্প যে দাবি করেছেন সেটিকে “অলীক ধারণা” বলে উড়িয়ে দেন তিনি। পেজেশকিয়ান বলেন, “আমাদের ক্ষমতা আমাদের বিজ্ঞানীদের মাথায়- স্থাপনাগুলোতে নয়।”

পেজেশকিয়ান দাবি করেন, গত ১৫ জুন তেহরানে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইসরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ওই হামলায় তিনি হালকা আঘাত পান। তিনি বলেন, ইসরায়েল পরিকল্পনা করেছিল ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে বিশৃঙ্খলায় ঠেলে দেওয়ার, যাতে সরকার পতন ঘটে। তবে সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তখন ইরান কাতারের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। এ প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা কাতার বা কাতারের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতা পোষণ করি না। ওই হামলা ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটির বিরুদ্ধে।”

তিনি জানান, হামলার দিন তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ফোন করে বিষয়টি পরিষ্কার করেছিলেন।

ইরানের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে এবং সততার সাথে বলছি যে আমরা কাতার রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ করিনি, বরং আমরা আমেরিকার একটি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছি যারা আমাদের দেশে বোমা হামলা চালিয়েছে। যদিও কাতার এবং কাতারের জনগণের প্রতি আমাদের সকল উদ্দেশ্যই ভালো এবং ইতিবাচক।”

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই মাস আমাদের জাতীয় জীবনে অশান্তি ডেকে এনেছে : রনি Jul 24, 2025
img
মাগুরায় বাসে তল্লাশি চালিয়ে ১ হাজার ৯৮২ পিস ইয়াবাসহ যুবক গ্রেফতার Jul 24, 2025
img
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে পাকিস্তানি অভিনেত্রীর শোক Jul 24, 2025
img
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আ.লীগের ৭ নেতাকর্মী গ্রেফতার Jul 24, 2025
img
তুরস্কে দাবানল নেভাতে গিয়ে নিহত অন্তত ১০ জন Jul 24, 2025
img
রিয়াল মাদ্রিদের আইকনিক ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলবেন এমবাপ্পে Jul 24, 2025
img
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেফতার করল ডিবি Jul 24, 2025
img
১০ আর্থিক বছরে ভারত থেকে মোবাইল ফোন রপ্তানি বেড়েছে ১২৭ গুণ Jul 24, 2025
img
দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ? Jul 24, 2025
img
গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র স্থানান্তর করছে যুক্তরাষ্ট্র Jul 24, 2025
img
জলবায়ু ইস্যুতে এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে Jul 24, 2025
img
গাইবান্ধায় পুকুরে ডুবে নিহত ১ Jul 24, 2025
img
বিদেশি ঋণ ফের ১০৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল Jul 24, 2025
img
ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনায় রাশিয়া ও ইউক্রেন, সহস্রাধিক বন্দি বিনিময় Jul 24, 2025
img
হবিগঞ্জের ডিসি আ.লীগের দোসর : এনসিপি Jul 24, 2025
img
ম্যানচেস্টার টেস্টে জয়সওয়াল ও সুদর্শনের অর্ধশতকে প্রথম দিন শেষ করল ভারত Jul 24, 2025
img
দেশজুড়ে ২ দিন ধরে চলমান বিক্ষোভের কাছে নতি স্বীকার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির Jul 24, 2025
img
সুন্দরবনে অবৈধ শিকারে ৮০০ কেজি চিংড়িসহ ট্রলার জব্দ Jul 24, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে প্রাণ গেল আরও অন্তত ১০০ জনের Jul 24, 2025
img
ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি-বজ্রপাত Jul 24, 2025