সামরিক সহযোগিতায় ভারত-ইসরায়েলের বৈঠক

গাজায় চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ চলার মধ্যেই সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত ও ইসরায়েল। বুধবার (২৩ জুলাই) দিল্লিতে দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে এই ঘোষণা আসে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলকে ঘিরে বাড়তে থাকা নিন্দার প্রেক্ষাপটে এক শক্ত বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮০টিরও বেশি শিশুসহ ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে। সোমবার (২১ জুলাই) একদিনেই ১৫ জন মারা গেছে অনাহারে। এই পরিস্থিতিকে বিশ্বের বহু দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবিতে সোচ্চারতা বাড়ছে, তখন ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আমির বারামের মধ্যে বুধবার দিল্লিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতের তথ্য দপ্তর (পিআইবি) থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের এই সফর ভারত–ইসরায়েল প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা সচিব বৈঠকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স নীতি’ পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে ও ৭ অক্টোবর ২০২৩ এর হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করে সকল জিম্মির মুক্তি দাবি করেন। বিবৃতিতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও ‘ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সমর্থন’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই সামরিক বৈঠক ছাড়াও, বুধবারই দিল্লির মেয়র রাজা ইকবাল সিং রাজধানীতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজারের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন ও এই কঠিন সময়ে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ভারত ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

দুই পক্ষের আলোচনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পার্ক ব্যবস্থাপনা এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইসরায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়। দিল্লি পৌর কমিশনার অশ্বিনী কুমার জানান, ইসরায়েল প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর দেশ হওয়ায় তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আদান-প্রদানে পৌর কর্পোরেশনের কার্যকারিতা আরও উন্নত হবে।

তবে মেয়র ইকবাল সিংয়ের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন দিল্লিভিত্তিক মানবাধিকার কর্মীরা। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক খোলা চিঠিতে বলা হয়, এই ‘কঠিন সময়ে’ ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা ফিলিস্তিনিদের রক্তের সঙ্গে নির্মম তামাশা।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মেয়রের বক্তব্য সত্যের বিকৃতি এবং নৈতিকভাবে বিশ্বাসঘাতকতা। কোন ‘কঠিন সময়ের’ কথা বলা হচ্ছে? যারা বোমা বর্ষণের, হাসপাতাল ধ্বংসের, শিশুহত্যা ও খাবার-পানির অবরোধের শিকার, তারা ফিলিস্তিনিরা- ইসরায়েল নয়।

এই কূটনৈতিক ও সামরিক সংলাপের পাশাপাশি সম্প্রতি ইসরায়েল ও ভারত ‘ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন এগ্রিমেন্ট (আইপিএ)’ চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেয়, যা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগের ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করবে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ও ব্রিটেনে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি একাডেমিক আব্দুল্লাহ মোয়াসওয়েস বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে সেটিকে ভোটারদের কাছে ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবে তুলে ধরছে, যেখানে ইসরায়েল-প্রীতি একটি জনপ্রিয় আবেগ।

উল্লেখ্য, ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবং বর্তমানে ইসরায়েলি অস্ত্রের যৌথ উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা সরকারকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন, বিশেষ করে যখন জানা গেছে যে দিল্লি কমব্যাট ড্রোন ও এআই-চালিত অস্ত্র ইসরায়েলকে পাঠিয়েছে গাজা যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারত সরকার জানিয়েছিল, তারা ‘জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য’ দিয়ে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি ও সরবরাহের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

সূত্র: দ্য মিডল ইস্ট মনিটর

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সারা দেশে বৃষ্টির আভাস, কমতে পারে তাপমাত্রা Jul 26, 2025
img
এনসিপি সরকার গঠন করলে ৬৪ জেলায় চাকরির ব্যবস্থা করব : নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী Jul 26, 2025
রাজনীতিবিদদের ঢাকার খালে গোসল বাধ্যতামূলক: জামায়াত মিডিয়া প্রধানের প্রস্তাব Jul 26, 2025
কি ঘটেছিল ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই? Jul 26, 2025
img
পুরনো স্টাইলে আর নির্বাচন চলবে না : অধ্যাপক মজিবুর রহমান Jul 26, 2025
img
জুলাই বিপ্লব ওলামায়ে কেরামের সামনে অবারিত সুযোগ তৈরি করেছে : ধর্ম উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
রাজধানীতে চাঁদাবাজির সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়কসহ হাতেনাতে ৫ জন গ্রেপ্তার Jul 26, 2025
img
আওয়ামী লীগের অফিস দখলের মতো কাজ কোনো সভ্য দেশে করা যায় না : আবদুন নূর তুষার Jul 26, 2025
img
আমরা যদি ব্যর্থ হই তার খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হবে : সিইসি Jul 26, 2025
img
জুলাইযোদ্ধারা ৩ ক্যাটাগরিতে ভাতা পাবেন : ফারুক-ই-আজম Jul 26, 2025
img
জুলাই আন্দোলনের ‘মূলনায়ক’ তারেক রহমান : আমীর খসরু Jul 26, 2025
img
‘ওবায়দুল কাদেরকে পালাতে সহায়তা করেছে যুবদল নেতা’ দাবি করা সেই জনি আটক Jul 26, 2025
img
এশিয়া কাপে ‘বি’ গ্রুপে জায়গা পেল বাংলাদেশ Jul 26, 2025
সন্তানকে সময় দিতেই আমেরিকায় এক হচ্ছেন শাকিব-বুবলী Jul 26, 2025
গ্ল্যামারের আড়ালে অন্ধকার! আলোচিত ৭ অভিনেত্রীর চাঞ্চল্যকর কাহিনী Jul 26, 2025
আরবি ও ইসলাম শিক্ষা নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা Jul 26, 2025
img
দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব : ডা. শফিকুর রহমান Jul 26, 2025
img
সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ Jul 26, 2025
img
‘টাকার বিনিময়ে কোথাও যাইনি, গাড়িতে ধরা খেয়েছি এটা কেমন টপিক’ Jul 26, 2025
img
১৫ বছর পর অষ্টম শ্রেণিতে ফের চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা Jul 26, 2025