মমতার ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্প ভোটের রাজনীতি না উন্নয়ন?

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই নতুন একটি প্রকল্প ঘোষণা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আঞ্চলিক ‘ছোটখাটো সমস্যা’ সামাল দিতে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পে ধার্য হয়েছে মোট আট হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্পটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাড়ার কল, পাড়ার স্কুলের ছাদ মেরামতির মতো কাজ এই প্রকল্পটির আওতায় পড়বে। এই প্রকল্পে এক একটি বুথের জন্য ধার্য হয়েছে ১০ লাখ টাকা। তিনটি বুথ নিয়ে তৈরি হবে একটা ‘পাড়া’। সরকারি আধিকারিক মারফত সেই টাকা আসবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে তার এই প্রকল্প নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট বাক্সের ‘ফায়দা তুলতেই’ নতুন প্রকল্পের ঘোষণা। আবার, প্রকল্পের কার্যকারিতা কী হবে এবং এই প্রকল্পের টাকা তছরুপ হওয়া থেকে কীভাবে আটকানো যাবে সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

‘শাসক দল সুবিধা পায়’
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, অনেক প্রকল্পই উন্নয়নে সাহায্য করে না বরং রাজনৈতিকভাবে শাসক দলকে সহায়তা করে। প্রথমত, কোনো প্রকল্প ঘোষণা করা হলে শাসক দলও দৃশ্যত তার থেকে একটা সুবিধা পায়। মানুষ দেখেন, নতুন কাজ হচ্ছে। নির্বাচনে তার একটা সদর্থক ভূমিকা থাকে।

তবে এক্ষেত্রে, শাসক দল নিজেদের সংগঠনের কাজেও এই প্রকল্পকে ব্যবহার করবে বলে মনে করেন বিশ্বনাথ। তিনি বলেন, যে টাকা আসবে তা খরচ হবে আঞ্চলিক ছেলেদের মাধ্যমে। নির্বাচনের আগে তারা যেন অন্য দলের প্রতি আনুগত্য না দেখায় তার সরকারি প্রচেষ্টাও বলা যেতে পারে একে।

তিনি মনে করেন, যারা এই অর্থ পাবে তারা অনেকেই শাসক দলের পার্টি অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করেন। এটা অনেকটা তাদের হাতে রাখার প্রয়াস। এখন এই প্রকল্পটি দিয়ে শাসক দল কতটা নির্বাচনী ডিভিডেন্ট তুলতে পারবে সেটাই দেখার।

‘তছরুপের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে’

সব শাসকদলই নির্বাচন মাথায় রেখে প্রকল্প ঘোষণা করে বলে মনে করেন প্রাক্তন আমলা এবং সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র। তিনি বলেন, সব সরকারি প্রকল্প থেকেই শাসক দল ভোটের সাহায্য পেতে চায়। এরা অন্যথা নয়। তবে একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই এই শাসক দল অন্যদের থেকে আলাদা। এরা টাকা লুণ্ঠনকে শিল্পের পর্যায় নিয়ে গেছে। আমি ২০০৬-এ অবসর নিয়েছি। এখনকার সরকারি আধিকারিকদের কাছ থেকে যা খবর পাই তা পিলে চমকে দেওয়ার মতো।

ভগীরথ বলেছেন, আমাদের সময় সরকারি আমলারা যে পরিমাণ স্বাধীনতা বা এক্তিয়ার পেতেন এখন তা পান না। এই প্রকল্প কী খাতে ব্যবহার করা হবে বা তার দায়িত্বে কারা থাকবেন জানি না। তবে যেই মুহুর্তে, ওয়ার্ড বা পঞ্চায়েত এলাকার বদলে বুথকে নির্দিষ্ট করে প্রকল্প ঘোষণা হয় তখনই বোঝা যায় এটা ভোটের কথা মাথায় রেখেই ঘোষণা করা হয়েছে।

তার মতে, ক্লাব বা পুজো কমিটিকে দেওয়া মোটাদাগের ডোল না হলেও এই প্রকল্প আসলে নির্বাচনের আগে পাইয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি। তবে বুথ প্রতি ১০ লাখ টাকা অনেকটা। কীভাবে কারা এই টাকা পাবেন তা প্রকল্প শুরু না হলে বোঝা সম্ভব নয়।

‘ভারতে অনুদানকে ছোট করে দেখা ঠিক না’

অন্যদিকে, ভারতের মতো দেশে যেখানে দারিদ্রসীমার নীচে লক্ষাধিক মানুষের বাস সেখানে সরকারি অনুদান বা ভর্তুকি আদতে অর্থনীতিকে পুষ্ঠ করে বলে মনে করেন প্রাক্তন আমলা জহর সরকার। তিনি বলেছেন, যেটাকে ডোলের রাজনীতি বলা হয়, আমি তাকে বলি ওয়েলফেয়ারিজম বা কল্যাণকর নীতি। আমাদের দেশের সরকার যদি দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষদের আক্ষরিক অর্থে সাহায্য না করে তাহলে সাংঘাতিক বিপদ। সরকার মানুষকে চাল ডাল দেয় তাদের রোজকার জীবন ধারণের জন্য। এটা আজ থেকে নয়, বহুদিন ধরে চলে আসছে।

তার মতে, এই রাজ্যে কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পগুলো কেবল মাত্র মানুষের খরচ করার ক্ষমতা বাড়িয়েছে তাই নয়, নারীশক্তির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অনেকক্ষেত্রেই এই ভর্তুকি বা সরকারি প্রকল্পের নামে বিভিন্ন সরকার কর্পোরেট দুর্নীতির ফাঁদে পা দেয়। তবে তার জন্য ভর্তুকি বা অনুদানকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না।

এমকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এক বছরে বিএনপির আয় ১১ কোটি টাকা : রিজভী Jul 27, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 27, 2025
img
আর্সেনালে যোগ দিলেন ইউরোপের শীর্ষ গোলদাতা Jul 27, 2025
img
সন্ধ্যার মধ্যে দেশের ৫ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের আভাস Jul 27, 2025
img
স্ত্রীর বিলাসী চাহিদায় চাকরি ছেড়ে ডাকাত যুবক! Jul 27, 2025
img
নির্বাচন কমিশনের কাছে বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিল বিএনপি Jul 27, 2025
img
মিলানের কাছে হার দিয়ে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি শুরু লিভারপুলের Jul 27, 2025
img
জাতীয় দলে হস্তক্ষেপ করি না, স্পষ্ট বার্তা দিলেন বুলবুল Jul 27, 2025
img
পাকিস্তান সিরিজে প্রায় ৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রির রেকর্ড বিসিবির Jul 27, 2025
img
ফের ইংলিশ ও গ্রিনের ব্যাটে জয় পেল অস্ট্রেলিয়া Jul 27, 2025
img
ছন্দে ফিরলেন স্কারলেট, বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ Jul 27, 2025
img
তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি আজ Jul 27, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ার সফর শেষে কানাডা যাচ্ছে ওয়ারফেজ Jul 27, 2025
img
আগস্টে নেইমার ও সান্তোসের সামনে কঠিন লড়াই Jul 27, 2025
img
অ্যানিমেল ২ নিয়ে প্রশ্নে ববি দেওলের সোজাসাপ্টা উত্তর Jul 27, 2025
img
১ লাখ ৮৩ হাজার অভিবাসীর পায়ে নজরদারির শেকল পরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র Jul 27, 2025
img
সার্জারির আশ্রয় পুরুষরাও গ্রহন করেন, দোষ হয় নারীদের : কাজল Jul 27, 2025
img
এশিয়া কাপে দ্বিমুখী সিদ্ধান্তে ভারত, ক্ষুব্ধ আজহারউদ্দিন Jul 27, 2025
img
আজ দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে? Jul 27, 2025
img
মেসিকে ছাড়া গোলশূন্য ড্র মায়ামির Jul 27, 2025