ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, কেজিতে কেজিতে সোনা বিলানো ছিল যার নেশা

এখন ধনীদের তালিকা বললেই সবার আগে নাম উঠে আসে ইলন মাস্কের। তাই না? টেসলা, স্পেসএক্স—সবই তার দখলে। কিন্তু একসময় এমন এক মুসলিম সম্রাট ছিলেন, যার ধারের কাছেও আজকের কেউ নেই। ওই সম্রাট যদি চাইতেন, তাহলে নিজের রাজ্যের ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঢেকে দিতে পারতেন খাঁটি সোনায়! হয়তো রূপকথার মতো শোনাচ্ছে, কিন্তু এই গল্পটা একদমই সত্যি।

১৪ শতকের পশ্চিম আফ্রিকার এক সম্রাট—নাম তার মানসা মুসা। এমন এক ধনী মানুষ, যার সম্পদের ধারে কাছেও আধুনিক যুগের এলন মাস্ক, জেফ বেজোস কিংবা বার্নার্ড আর্নল্ট যেন বালির ঠেলা। তার রাজ্য ছিল মালি সাম্রাজ্য, যেখানে ছিল পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সোনার ভান্ডার। ইতিহাসবিদরা বলেন, তখনকার দুনিয়ায় প্রায় অর্ধেক সোনা বের হতো মালির মাটি থেকে।

১৩২৪ সাল। মানসা মুসা রওনা দিলেন হজে। কিন্তু সেটা ছিল শুধু এক হজযাত্রা নয়, ছিল যেন এক চলন্ত রাজ্য। প্রায় হাজার মানুষের বিশাল বহর—মন্ত্রী, সৈন্য, দাস, ব্যবসায়ী, এমনকি কবিও ছিল সেই দলে। উটের পিঠে ছিল সোনাভর্তি থলে। সৈন্যরা কেবল সোনা বহনের দায়িত্বে ছিল, আর দাসদের গায়ে ঝলমলে স্বর্ণালংকরণ ও পারস্যের রেশমি জামা।

তারা যখন কায়রোতে পৌঁছে, তখন শুরু হলো অবিশ্বাস্য দান। যার পেট খালি, তার হাতে সোনা। কেউ কিছু চাইলেও তাকেও দেওয়া হতো। রাস্তায় রাস্তায় বিতরণ করা হচ্ছিল কেজিতে কেজিতে খাঁটি সোনা! এই দান এতটাই ব্যাপক ছিল যে কায়রোর বাজারে স্বর্ণের মূল্য এত নিচে নেমে যায়, যা ১০ বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেখানকার অর্থনীতি। গবেষণায় জানা যায়, এই যাত্রা মধ্যপ্রাচ্যে ১৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ধস সৃষ্টি করেছিল।

তবে মানসা মুসা কেবল ধনীই ছিলেন না, জ্ঞান ও সংস্কারের দিকেও ছিলেন গভীরভাবে আগ্রহী। তিনি গড়ে তুলেছিলেন টিমবাকটু শহর—যেখানে স্কুল, মসজিদ ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আন্দালুসিয়ার এক কবি ও স্থপতিকে এনে তিনি নির্মাণ করান বিখ্যাত জিঙ্গারেবার মসজিদ, আর পুরস্কার হিসেবে তাকে দেন ২০০ কেজি সোনা—যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২২৬ কোটি টাকা।

এই টিমবাকটু-ই পরবর্তীতে হয়ে ওঠে আফ্রিকার জ্ঞান, সংস্কৃতি ও গবেষণার কেন্দ্র। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত পড়তে এখানে। এখানেই গড়ে ওঠে বিখ্যাত শংকর বিশ্ববিদ্যালয়। তার খ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে ১৩৭৫ সালের এক ইউরোপীয় মানচিত্রে তাকে আঁকা হয়েছিল এক হাতে সোনার টুকরো ধরে বসে থাকা রাজা হিসেবে। তার হাত ধরেই প্রথমবারের মতো মালির নাম উঠে আসে বিশ্ব মানচিত্রে।

কিন্তু সব রূপকথারই একটা শেষ থাকে। ১৩৩৭ সালে মানসা মুসার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা আর সেই সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেনি। একে একে ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তি গ্রাস করে নেয় তার গড়ে তোলা সেই সমৃদ্ধ সংযোগ।

তবুও ইতিহাসের বাতায়ন থেকে যায় সেই এক সম্রাটের গল্প—যিনি সোনার মতোই উজ্জ্বল ছিলেন, কিন্তু হারিয়ে যান সময়ের ধুলোর নিচে।

এফপি/টিএ  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মাওলানা ভাসানীর আদর্শেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই : নাহিদ ইসলাম Jul 29, 2025
img
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চতুর্থবারের মতো সাক্ষাৎ Jul 29, 2025
img
দেশে ফিরছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী যোদ্ধা সাহসী সাংবাদিক এমদাদ চৌধুরী দীপু Jul 29, 2025
img
আজ বিশ্ব বাঘ দিবস Jul 29, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট গ্লোবাল কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানালেন সৌদি যুবরাজ Jul 29, 2025
img
সমন্বয়ক হওয়ার পর পাল্টে গেছে রানার জীবন Jul 29, 2025
img
‘বর্ডার ২’ দিয়ে বরুণ ধাওয়ানের বিপরীতে বড় পর্দায় অভিষেক মেধা রানার Jul 29, 2025
img
একদিন একা একা মরে যাব, পাশে কেউ থাকবে না : প্রিয়াঙ্কা Jul 29, 2025
img
গাজায় পৌঁছাল বোতলভরা খাবার Jul 29, 2025
img
আগামী ১১ দিন নৈরাজ্যের আশঙ্কা ঠেকাতে এসপিদের কাছে এসবির চিঠি Jul 29, 2025
img
পিআর পদ্ধতি বোঝেন না, রাজনীতি করার অধিকার নেই : রেজাউল করীম Jul 29, 2025
img
আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে বিদেশি সহায়তার নির্ভরতা কমানোর আহ্বান Jul 29, 2025
img
বনি আমিনের পোস্ট দেখে জানতে পারলাম দুটি বিয়ে করেছি : হান্নান মাসউদ Jul 29, 2025
img
একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই দায়িত্ব হস্তান্তর হবে, ক্ষমতায় যেই আসুক : আসিফ মাহমুদ Jul 29, 2025
img
ফকিরেরপুল নিয়ে বিপাকে বাফুফে Jul 29, 2025
img
খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠাতে সরকারকে চিঠি দিল বিএনপি Jul 29, 2025
img
ফারাজ করিমের বাড়ির দরজায় ঝুলছে দুদকের নোটিশ Jul 29, 2025
img
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ হতেই হবে : নাহিদ ইসলাম Jul 29, 2025
img
পুনরায় খাল খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি : রিজভী Jul 28, 2025
img
চাঁদাবাজদের পেছনের পৃষ্ঠপোষকদেরও বিচার করতে হবে : তাসনিম জারা Jul 28, 2025