রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তা করছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের মিত্র ঠিক আছে, কিন্তু সব সময় শতভাগ মিলবে না’
বৃহস্পতিবার ফক্স রেডিওতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল কেনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বিরক্তিকর বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং রুশ সামরিক সরঞ্জাম ও জ্বালানি কেনার কারণে অতিরিক্ত জরিমানা ঘোষণার পরদিন রুবিও আরও বলেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, বৈশ্বিক বাণিজ্য জটিল। ভারত আমাদের মিত্র, কৌশলগত অংশীদার। পররাষ্ট্রনীতিতে সবকিছুতে সব সময় ১০০ শতাংশ মিল হবে না।’
ফক্স রেডিওতে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভারত অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে। এতে প্রেসিডেন্ট অখুশি কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
রুবিও বলেন, ‘ভারতের বিশাল জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। রুশ তেল নিষিদ্ধ থাকায়, তারা অনেক সময় আন্তর্জাতিক দরের চেয়েও কম দামে তা পাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এতে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য বজায় থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের একটি বিরক্তিকর দিক, যদিও একমাত্র নয়। আমরা ভারতের সঙ্গে বহু বিষয়ে সহযোগিতা করছি।’
ট্রাম্পের ভারতের ওপর শুল্ক ঘোষণা
গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতের সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। এর পাশাপাশি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য একটি অতিরিক্ত জরিমানাও ধার্য করা হবে, যার পরিমাণ এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘মনে রাখুন, যদিও ভারত আমাদের বন্ধু, আমরা তাদের সঙ্গে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ তাদের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম উচ্চতম। সবচেয়ে কঠোর ও দুর্বিষহ অ-আর্থিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তারা তৈরি করেছে। তারা সর্বদা তাদের সামরিক সরঞ্জামের বিশাল অংশ রাশিয়া থেকে কেনে। রাশিয়ার অন্যতম প্রধান জ্বালানি ক্রেতাও ভারত। চীনের সঙ্গে এক হয়ে তারা এটা করছে। তারা এমন এক সময় এটা করছে যখন সবাই চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়।’
তিনি আরও লেখেন, ‘অতএব, ভারতকে ১ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং উপরোক্ত কারণে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর ভারত সরকার জানায়, তারা দেশের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বক্তব্যটি সরকার নজরে নিয়েছে এবং এর প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করছে। গত কয়েক মাসে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার কৃষক, উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কল্যাণ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, তেমনি এই ক্ষেত্রেও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
সূত্র: এনডিটিভি
এমকে/টিএ