বাগেরহাটের রামপালে ইউনিয়ন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসী বাজারে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাজারের দোকানপাট, বসতবাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয় দেশীয় অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল, রামদা, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল।
শনিবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় একই এলাকায় প্রথম দফা সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হন। সেই ঘটনার জের ধরেই রোববার ফের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ১২–১৩ জন ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর জখম হন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে সন্ধ্যার পরেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউনিয়ন বিএনপির আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম হাওলাদার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাজারুল ইসলাম সাজু এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে বেতবুনিয়া এলাকায় আব্দুল আলিমের অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম হাসান পলকসহ ৮ নেতা-কর্মীকে মারধর করেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে রোববার বিকেলে শামীম পলক ও সাজুর অনুসারীরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শুরুর পরপরই আব্দুল আলিমের লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। পাল্টা হামলায় সন্ন্যাসী বাজারের অন্তত ১৮টি দোকান এবং আব্দুল আলিমের বসতবাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতেই সংঘর্ষ ও ভাঙচুর চলছিল। সংঘর্ষকারীরা ভবনের ছাদ থেকে ইট নিক্ষেপ করছে এবং লাঠিসোটা হাতে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত ছিল। কিছুক্ষণ পরে রামপাল থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে, কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।’
সাবেক যুবদল নেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী সাজারুল ইসলাম সাজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম হাসান পলকের জনপ্রিয়তায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভীত হয়ে পড়েছে। নিজেদের নিশ্চিত ভরাডুবি আঁচ করে তারা নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের বহু নেতাকর্মী আহত হন। এ হামলার নেতৃত্ব দেন সাবেক ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মিঠু ও মজনু।’
মল্লিকেরবের ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় পুলিশ রামপাল থানা থেকে এলেও তারা কিছু করতে পারেনি। পুলিশের সামনেই আব্দুল আলিম হাওলাদারের অনুসারীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
এদিকে সংঘর্ষে আহত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী সাজারুল ইসলাম সাজু বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম হাওলাদারের অনুসারীরা অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশৃঙ্খলা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কেএন/টিএ