প্রসিধ কৃষ্ণার শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মারতে চাইলেন হ্যারি ব্রুক। ব্যাটে-বলে টাইমিংটা ঠিকঠাক না হওয়ায় ডিপ স্কয়ার লেগে মোহাম্মদ সিরাজের হাতে ক্যাচ। সীমানা ঘেঁষে সিরাজও ক্যাচটা নিলেন ভালোভাবেই। তবে ক্যাচ নিয়ে পরোক্ষণেই শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারলেন না। বল নিয়েই সীমানা পেরিয়ে গেলেন সিরাজ। জীবন পাওয়ার সঙ্গে ছয় রান যোগ হয় ব্রুকের নামের পাশে। ইংলিশ ব্যাটার সুযোগটা কাজে লাগালেন মনে রাখার মতো করেই।
সিরাজ যখন কপাল চাপড়ে যাচ্ছেন তখন দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে টি-টোয়েন্টি মেজাজে তুলেছেনন ব্রুক। ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’ এমন কথার যথার্থ প্রমাণ দিয়ে ডানহাতি ব্যাটার করেছেন সেঞ্চুরি। জো রুটের ব্যাট থেকেও এসেছে একশ ছোঁয়া ইনিংস। ওভালে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিতে শেষ দুদিনে ৩২৪ রান করতে হতো ইংল্যান্ডকে। অথচ সেই মাঠে ২৬৩—এর বেশি রান তাড়া জেতার রেকর্ড নেই কারও। ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডই ২৬৩ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ম্যাচ জিতেছিল।
ওভালে রেকর্ড গড়ে জিততে ইংল্যান্ডের কাজটা সহজ করে দিয়েছেন ব্রুক ও রুট। তাদের দুজনের সেঞ্চুরিতেই ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। ম্যাচ জিততে এখনো ৩৫ রান করতে হবে ইংলিশদের। শেষ বিকেলের বৃষ্টি অপেক্ষা বাড়িয়েছে ইংল্যান্ডের ইতিহাস গড়ার। একমাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে উইকেটে আছেন জেমি স্মিথ। তবে ব্যাটিং করার সামর্থ্য ভালোভাবেই আছে জেমি ওভারটন ও গাস অ্যাটকিনসনের।
ম্যাচ ও সিরিজ জিততে শেষ দিনে ৩৫ রান দরকার ইংল্যান্ডের। ভারতের প্রয়োজন ৪ উইকেট। এমনকি ৩ উইকেট নিলেও জয়ের সুযোগ থাকবে সফরকারীদের সামনে। কারণ কাঁধের চোটে ইতোমধ্যে ছিটকে গেছেন ক্রিস ওকস। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং না করা ওকস দ্বিতীয় ইনিংসে নামবেন কিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই। তিনি ব্যাটিংয়ে নামলে তখন অবশ্য চার উইকেট নিতে হবে ভারতকে। শেষের দিনে শেষের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় ওভাল টেস্ট।
এক উইকেটে ৫০ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের সকালে ব্যাটিংয়ে নামেন ওলি পোপ ও বেন ডাকেট। সকালের শুরুতে তারা দুজনে মিলে ভারতীয় পেসারদের ভালোভাবেই সামলেছেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডাকেট। যদিও একটু পরই ফিরতে হয় বাঁহাতি ওপেনারকে। প্রসিধের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করার চেষ্টায় আউট সাইড এজ হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ডাকেট। ফেরার আগে ৮৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি পোপ।
ওভালে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেয়া এই ব্যাটার সিরাজের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ২৭ রানে। দ্রুতই তাদের দুজনকে হারানোর পর রুট ও ব্রুক মিলে জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। যদিও শুরুতেই ফিরতে পারতেন ব্রুক। পেসার প্রসিধের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগ সিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন। সহজ ক্যাচ লুফে নিলেও শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারায় সীমানা পেরিয়ে যান সিরাজ। তাতে জীবন পাওয়ার সঙ্গে ছয় রানও পেয়ে যান ব্রুক।
জীবন পেয়েই টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি। ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ডানহাতি ব্যাটার সেঞ্চুরি করেছেন ৯১ বলে। ইংল্যান্ডের হয়ে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি। সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। চা-বিরতির আগে আকাশ দীপের বলে ডাউন দ্য উইকেট এসে খেলতে চেয়েছিলেন ব্রুক। হাত থেকে ব্যাট ফসকে গেলে মিড অফে সিরাজের হাতে ক্যাচ দেন ৯৮ বলে ১১১ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার।
ব্রুকের বিদায়ে ভাঙে রুটের সঙ্গে ১৯৫ রানের জুটি। চতুর্থ ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে এটি ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
২০২২ সালে এজবাস্টন টেস্টে জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ২৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন রুট। চা বিরতি থেকে ফিরে ১৩৭ বলে ক্যারিয়ারের ৩৯তম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তাতে ছাড়িয়ে গেছেন কুমার সাঙ্গাকারাকে (৩৮ টেস্ট সেঞ্চুরি)। ভারতের বিপক্ষে রুটের এটি ১৩তম সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য ভারতের বিপক্ষে রুটের সেঞ্চুরির সংখ্যা ১৬টি। সমান সেঞ্চুরি আছে স্টিভ স্মিথেরও।
ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজে নিজের শেষ সেঞ্চুরিটা ইংল্যান্ডের প্রয়াত সাবেক কিংবদন্তি ব্যাটার গ্রাহাম থর্পকে উৎসর্গ করেছেন রুট। চা-বিরতির আগে ব্রুক ফেরার পর রুটকে সঙ্গ দিতে এসেছিলেন জ্যাকব বেথেল।
তবে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। প্রসিধের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ৫ রানে। একটু পর রুটের উইকেটও নেন ডানহাতি এই পেসার। প্রসিধের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন উইকেটকিপার ধ্রুব জুরেল।
সাঙ্গাকারাকে ছাড়িয়ে সেঞ্চুরির দিনে ১৫২ বলে ১০৫ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন রুট। ডানহাতি ব্যাটার ফেরার পর একটু চাপেই পড়ে যান স্মিথ এবং ওভারটন। ভারতীয় পেসারদের ঠিকঠাক খেলতে না পারলেও উইকেট দেননি তারা। দিনের খেলার বেশ খানিকটা সময় বাকি থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেন ম্যাচ অফিসিয়ালসরা। ইংল্যান্ডকে জেতানোর স্বপ্ন নিয়ে শেষ দিনের সকালে ব্যাটিংয়ে নামবেন স্মিথ এবং ওভারটন।
এফপি\টিকে