ইতালির সরকার বুধবার ১৩.৫ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু নির্মিত হবে। এর মাধ্যমে সিসিলি দ্বীপ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে।
বহু দশকের পরিকল্পনা ও ব্যাপক বিতর্কের পর পরিবহন ও অবকাঠামো বিষয়কমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি এদিন জানান, মন্ত্রিসভাসংক্রান্ত একটি কমিটি মেসিনা প্রণালির ওপর রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে সালভিনি বলেন, ‘এটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম একক স্প্যানবিশিষ্ট সেতু’ এবং এটি সিসিলি দ্বীপ ও ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যালাব্রিয়ার মতো দরিদ্র এলাকাগুলোর জন্য ‘উন্নয়ন ত্বরান্বিতকারী’ হিসেবে কাজ করবে।
সেতুটির নকশা অনুযায়ী, মাঝখানে দুটি রেললাইন থাকবে এবং উভয় পাশে তিনটি করে যান চলাচলের লেন থাকবে। সেতুর ঝুলন্ত অংশটি হবে ৩.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা একটি বিশ্বরেকর্ড।
এ ছাড়া সেতুটি এক হাজার ৩০০ ফুট (৪০০ মিটার) উচ্চতার দুটি টাওয়ারের মধ্যে বিস্তৃত থাকবে। অন্যদিকে তুরস্কের ১৯১৫ কানাক্কালে সেতু বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু হিসেবে পরিচিত।
এর টাওয়ারগুলোর মধ্যে প্রধান স্প্যান ২.০২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। সেতুটি ২০২২ সালে খোলা হয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, সেতুটির নির্মাণকাজ ২০৩২ সালের মধ্যে শেষ হবে এবং এটি অত্যাধুনিক প্রকৌশল প্রযুক্তিতে নির্মিত হবে, যাতে উচ্চগতির বাতাস ও ভূমিকম্প সহ্য করতে সক্ষম হয়। কারণ এই অঞ্চল দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
মন্ত্রীদের আশা, সেতুটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান নিয়ে আসবে। উপ-প্রধানমন্ত্রী সালভিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তবে পরিবেশগত প্রভাব ও ব্যয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই বিপুল অর্থ অন্যত্র ব্যয় করলে বেশি সুফল মিলত। আরো কিছু সমালোচকের বিশ্বাস, এই প্রকল্প কখনো বাস্তবায়িতই হবে না।
কারণ ইতালিতে বহু দিন ধরেই এমন বহু সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প ঘোষণা ও অর্থায়নের পরও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার শুরু হয়েছিল ৫০ বছরেরও বেশি আগে এবং এটি কয়েকবার শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৬ সালে ইতালির ওয়েবিল্ড গ্রুপের নেতৃত্বাধীন ইউরোলিংক কনসোর্টিয়াম টেন্ডার জিতে নেয়, কিন্তু ইউরোজোন ঋণ সংকটের কারণে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। পুনর্জীবিত এই প্রকল্পে এখনো ওই কনসোর্টিয়ামই ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।
এবার রোমের জন্য একটি বাড়তি প্রেরণা রয়েছে—সেতুর ব্যয়কে প্রতিরক্ষা ব্যয় হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপে ইতালি অন্যান্য ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে একমত হয়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। এই ব্যয়ের মধ্যে ১.৫ শতাংশ ‘প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত’ খাত, যেমন সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামোয় ব্যয় করা যাবে। রোম আশা করছে, মেসিনা সেতু এই শ্রেণিতে পড়বে, বিশেষ করে যেহেতু সিসিলিতে একটি ন্যাটো ঘাঁটি রয়েছে।
এফপি/ টিএ