বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে নির্বাচন ভবনে বেশকিছু আসনের সীমানা সংক্রান্ত দাবি-আপত্তির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩। এক পর্যায়ে জেলার দুই আসনের লোকজনই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় তারা হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে ইসি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরে আতাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নির্বাচনী আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ এবং বিজয়নগর নিয়ে। আমি এখানে শুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছি। এখানে একে একে অনেকেই শুনানিতে অংশগ্রহণ করছে, যুক্তিতর্ক তুলে ধরছে। আমি যখন কথা বলতে যাব, ওই মুহূর্তে রুমিন ফারহানা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। তার গুণ্ডাবাহিনী আমাকে টেনেহিঁচড়ে পায়ের নিচে ফুটবলের মতো লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, আমরা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছি। আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে আমাকে যেভাবে পায়ের নিচে লাথি মারা হয়েছে, যেভাবে পেটানো হয়েছে, আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে গেছে- সবাই দেখেছেন। আমি বলতে চাই, এই বাংলাদেশের জন্য আমরা জীবন দেইনি, রক্ত দেইনি, যাতে গণতন্ত্র নষ্ট হয়। আমরা চেয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, যেখানে সবাই যুক্তি-তর্ক তুলে ধরতে পারবে। কিন্তু আমি আমার কথা বলতেই পারলাম না।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে, নির্বাচন ভবনে যদি এত বড় একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে কোথায় আমাদের নিরাপত্তা আছে? আমি নিরাপত্তা চাই’, যোগ করেন তিনি।
আতাউল্লাহ দাবি করেন, ‘এখানে ১০টি ইউনিয়ন থেকে তিনটি ইউনিয়ন- আশুগঞ্জ, সরাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দুই আসনের সঙ্গে মিলিয়ে একটি খসড়া সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বিজয়নগরের এই তিন এলাকার লোকজন সরাইল এবং আশুগঞ্জের সঙ্গে যেতে চাচ্ছে না। বিভিন্ন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এই তিনটি ইউনিয়নকে সরাইল এবং আশুগঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অথচ এই তিনটি ইউনিয়ন সামাজিকভাবে, প্রশাসনিকভাবে এবং ভৌগোলিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সদর তিন আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
‘আমরা আবেদন জানিয়েছি, এই তিনটি ইউনিয়ন সদর তিন আসনের সঙ্গে রাখা হোক। এলাকার লোকজনও চায় না যে এই ইউনিয়নগুলো সরাইল ও আশুগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হোক’, যোগ করেন এনসিপির এ নেতা।
তবে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমি কোনো গুণ্ডা বদমাশের মেলা করিনি। করতে চাইলে করতে পারতাম। গুণ্ডা আনতে চাইলে গুণ্ডা আনা যায়, অসুবিধা হয় না। পাঞ্জাবি পরা একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। তারপরে আমার লোক তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন নারী। পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজন জবাব দিয়েছে। সিম্পল। ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই, তাই না? সেটাই হয়েছে। নির্বাচনের আগে একটা সীমানা নিয়ে যদি এরকম আচরণ আমরা দেখি, তাহলে নির্বাচনে কী হবে?
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিজয়নগরের ভোটার সংখ্যা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার। আর আমাদের সরাইল-আশুগঞ্জে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার। আর এই তিনটি ইউনিয়নের ভোটার হচ্ছে এক লাখ। এই এক লাখ যদি সরাইলের সঙ্গেও যুক্ত হয়, তারপরেও দেখা যাবে যে সদরের সঙ্গে বা বিজয়নগরের সঙ্গে সরাইলের ভোটার পার্থক্য অলমোস্ট ২ লাখ থেকে যায়। তো এত বড় একটা আসন সদর বা বিজয়নগর- সেই আসনটা অযৌক্তিক। বরং সরাইলের সঙ্গে যদি তিনটি ইউনিয়ন চলে আসে, তাহলে ভোটার সংখ্যায় একটা ব্যালেন্স তৈরি হয়।’
‘এই তিনটি ইউনিয়নে যারা বাস করেন- ভুদন্তি, চান্দুরা এবং হরশপুর- তাদের জমিজমার বেশিরভাগ কাজ সরাইলের সঙ্গে থাকে। তাদের জমির রেজিস্ট্রি থেকে শুরু করে অন্যান্য দাফতরিক কাজ সরাইল উপজেলায় গিয়ে করতে হয়। সেই কারণেই আমি বলেছি, এই তিনটা ইউনিয়নকে সরাইলের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হোক। আরেকটা কথা, এই তিনটি ইউনিয়নের লোকজন যদি বিজয়নগরে যায়, তাদের যাতায়াতের সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আর যদি তারা সরাইলে আসে তাদের সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। তাহলে আপনারাই বলেন, যেই তিনটি ইউনিয়ন বিজয়নগরে যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে, আর ১৫ মিনিটে সরাইলে যেতে পারে, তাহলে তাদের কোথায় থাকা উচিত? সরাইলে থাকা উচিত নাকি বিজয়নগরে থাকা উচিত? এই প্রশ্নগুলোই আমি নির্বাচন কমিশনে তুলেছিলাম’, যোগ করেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
বিএনপির এ নেত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো এখানে একটি মারামারি হয়েছে। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, আমি মনে করেছি আমার কেস আমি নিজেই প্রেজেন্ট করবো। সো, আমার কেস আমি প্রেজেন্ট করেছি। আমি আশা করেছিলাম নির্বাচন কমিশনের সম্মানের দিকে তাকিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এ যারা আছেন তারা গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে কমিশনে ঢুকবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি দেখলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর প্রার্থী সদলবলে ২০-২৫ জন মিলে গুণ্ডাপাণ্ডার মতো আচরণ করলেন। অত্যন্ত দুঃখজনক, অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি মনে করি এটা কমিশনের ভাবমূর্তি, গাম্ভীর্য এবং সম্মানের সঙ্গে যায় না।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কিছু ছবি দেখাচ্ছি, তারা এলাকায় বিভিন্ন মানুষকে কীভাবে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। এটাই তাদের চরিত্র। এখনো নির্বাচন আসেনি। অথচ সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এলাকায় এইভাবে মানুষকে পেটানো হচ্ছে। যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর প্রার্থী, তিনি এভাবে মানুষকে পেটিয়ে স্বীকারোক্তি নিয়েছেন। যাই হোক, আমরা নির্বাচন কমিশনে ভৌগোলিক দিক, জনসংখ্যা এবং অন্যান্য দিক বিবেচনা করে প্রেজেন্ট করেছি। আমি আশা করব নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত এবং সেটাই বহাল রাখবে।’
কেএন/এসএন