রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি প্রতিটি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি আগামী দিনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি আমার ব্যক্তিগত এবং বিএনপির পূর্ণ আস্থা ও সম্মান রয়েছে। বিএনপিঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফায় ১৬ নম্বর ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে- দল মত জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র বৃহৎ সকল জাতিগোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মকাজের অধিকার, নাগরিক অধিকার, জীবন ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধানের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। এটি আমাদের অঙ্গীকার। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি অঙ্গীকার আমরা বাস্তবায়ন করব।

শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী আমলে হামলা নির্যাতন উপেক্ষা করেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পতিত পরাজিত স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ সামনে এসেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করেছে। বিএনপি ঘোষিত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশের কর্মসংস্থান এবং কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে দল মত ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আপনাদের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা চায়।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৬ বা ৭৭ সালের দিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সমতলের বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়েছিল এবং সে সময় শহীদ জিয়া বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এবং তাদের সংস্কৃতি চর্চা বিকাশের লক্ষ্যে বিরিশিরি কালচার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়াও ট্রাইব্যুনাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেছিলেন গারো জাতিগোষ্ঠীর জন্য। রেডিওতে সালগিত্তা অনুষ্ঠান, ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ, বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন সরকার শহীদ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। শহীদ জিয়ার সঙ্গে সমতলের জাতিগোষ্ঠীর নিবিড় সর্ম্পক গড়ে উঠেছিল এবং নিবিড় সর্ম্পক গড়ে তোলার স্থান ময়মনসিংহ। জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দল গঠন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা-দীক্ষাসহ রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ আগ্রহে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ করার এবং সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই উদোগের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমের একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টম্বর বিএনপির অস্থায়ী সংগঠন হিসেবে জাতীতাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর প্রতিফলেই আজকে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আজকের এই প্রতিনিধি সমাবেশ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজ নিজ বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রেখেই বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে নিজেদের এবং আগামীর প্রজন্মের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাবালম্বিতা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আজকের এই সমাবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়ি বা সমতলের সকল জাতিগোষ্ঠী যদি নিজেদের স্বার্থ সর্ম্পকে সচেতন থাকে তাহলে কোনো অপশক্তি বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ নিতে পারবে না বা সক্ষম হবে না। বহু জাতিগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এই জাতিগোষ্ঠীকে বাঙালি বানাতে গিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মনে একটি অবিশ্বাসের বীজ বপন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছি- স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মন থেকে সেই অবিশ্বাস দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- ভাষা, গোত্র বর্ণ কিংবা দল মত ধর্ম দর্শন যার যার, কিন্তু বাংলাদেশ সবার। ধর্ম গোত্র ভাষা পাহাড়ি কিংবা সমতল যার যাই হোক, প্রত্যেকেই বাংলাদেশের ভূখণ্ডের নাগরিক। এতে প্রত্যেকের প্রধান পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। সুতরাং সমতল, কিংবা পাহাড়, রাজধানী কিংবা শহর, নগর, বন্দর, বসতি যার যেখানেই হোক। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনার, আমার এবং আমাদের সবার সমান অধিকার। বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশ শুধু বাঙালির নয়, ভিন্ন ভাষাভাষি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এবং বৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার এই বাংলাদেশ। এতে বসবাসকারী প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র জনগোষ্টী একেকটি রং। যাকে আমরা বলেছি- রেইনবো ন্যাশন। সকল ভাষাভাষি ও জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে বিএনপি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। দলীয়ভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যোগ্য প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি করা হবে। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সাংস্কৃতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠা, ট্রাইব্যুনাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে ট্রাস্ট গঠন এবং দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং নারী উদোক্তাদের ঋণ প্রদান ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।    

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি ভয়াবহন দানবীয় ফ্যাসিস্ট শাসনের পরে একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। এই নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে সবাই একটি বিষয়ে একমত। তা হলো- আমরা প্রত্যেকটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করবো। আপনারা যারা মনে করছেন- আপনারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, তা ঠিক নয়। আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব সময় বলেন, আমার নেতা তারেক রহমানও বলেন- কখনো এই কথা বলা যাবে না। সংখ্যালঘু বা সংখ্যগুরু বলা যাবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশি এবং সকলের অধিকার সমান।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মৃগেন হাগিদগের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমাজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সহসভাপতি সুভাস চন্দ্র বর্মণ, সহসভাপতি ড. অঞ্জন কুমার চিছাম, সুবাস চন্দ্র বর্মন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জন জেত্রা, বিন্যামিন আরেং, আইন বিষয়ক সম্পাদক বিপুল হাজং, জাতীয় হদি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার সিংহ, জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক হিমাংশু বর্মণ প্রমুখ।

সম্মেলনে দেশের ১৪টি জেলার ৩৪টি জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসি প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। 

ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫১ বছর বয়সে রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হলেন মোর্শেদ Sep 03, 2025
img
তারেক রহমান বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন : আযম খান Sep 03, 2025
img
নাম নিয়ে বিড়ম্বনায় জয়! Sep 03, 2025
img
প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে এনবিআর Sep 03, 2025
img
একদল মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করছে, আরেকদল চব্বিশ: আমীর খসরু Sep 03, 2025
img
সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে জামালদের ফ্লাইট! Sep 03, 2025
img
আতিফ আসলামের কনসার্টে নারী ভক্তের অদ্ভুত নাচে সমালোচনার ঝড় Sep 03, 2025
img
ডাকসু নির্বাচনে পুলিশ, ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ কখনো দেখিনি : মাসুদ কামাল Sep 03, 2025
img
চার শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি নিয়ে ডিএসইর সতর্কতা জারি Sep 03, 2025
ইউনাইটেডকে হারিয়েও জরিমানার মুখে গ্রিমসবি টাউন Sep 03, 2025
img
নির্বাচনে দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে প্রত্যাহার করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় Sep 03, 2025
img
ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে সিকান্দার রাজা Sep 03, 2025
img
দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া তরুণদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না : শিক্ষা উপদেষ্টা Sep 03, 2025
img
‘রোনালদোকে ভয় পেতাম পেনাল্টি এরিয়ায়, আর মেসিকে পুরো মাঠেই’ Sep 03, 2025
img
দুর্গাপূজায় বিজ্ঞাপনে একসঙ্গে মিমি-শুভশ্রী Sep 03, 2025
img
নির্বাচনের আগে ২ হাজার এএসআই নিয়োগ, সমান সংখ্যক পদোন্নতি : আইজিপি Sep 03, 2025
img
বেইজিংয়ে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পুতিন Sep 03, 2025
img
চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ৩টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে রাশিয়া: পুতিন Sep 03, 2025
সত্য উদঘাটন হলে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব: সাবেক আইজিপি Sep 03, 2025
জুলাইয়ে আহত ১৫৬০ জনের পরিবারকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ Sep 03, 2025