রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, চীন-রাশিয়া সম্পর্কের গভীরতা ‘নজিরবিহীন উচ্চতায়’ পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের পর মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বৈঠকে উভয় নেতাই একে অপরকে ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড’ সম্বোধন করে আলোচনা শুরু করেন।
পুতিন বলেন, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রাশিয়া-চীন সম্পর্কের কৌশলগত প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটেছে, যা এখন নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’ যুদ্ধকালীন সময়ে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও একে অপরের পাশে ছিলাম, এখনও আছি।’
অন্যদিকে জিনপিং বলেন, ‘চীন-রাশিয়া সম্পর্ক সদা-পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক মঞ্চের পরীক্ষায় পাস করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক সুশাসন প্রক্রিয়াকে আরও ন্যায্য ও যৌক্তিক করে তুলতে’ মস্কোর সঙ্গে বেইজিং কাজ করে যেতে আগ্রহী।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বেইজিং-মস্কো সম্পর্ককে ‘অনুকরণীয়’ বলে অভিহিত করেছে। খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া চীনে গ্যাস সরবরাহ বাড়াবে, অন্যদিকে বেইজিং এক বছরব্যাপী রুশ নাগরিকদের ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুযোগ দেবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেইজিংয়ে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অতিথি হিসেবে থাকছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা।
কিম জং উন এরই মধ্যে তার বুলেটপ্রুফ ট্রেনে করে চীনের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। তাকে স্বয়ং স্বাগত জানানোর জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
এর আগে পুতিন-জিনপিং উভয়ই চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেন। বিশ্লেষকদের মতে, এসসিও বিশ্ব মঞ্চে পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে এবং একটি সমীহ জাগানিয়া জোট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
সম্মেলনে পুতিন-জিনপিং উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর সমালোচনা করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বিশ্ব মঞ্চে ‘মোড়লসুলভ আচরণের’ প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। অপরদিকে পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর জন্য পশ্চিমা দেশগুলোই দায়ী।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরুর অল্প কয়েকদিন আগে বেইজিং সফর করেন পুতিন। সেই সময় মস্কো-বেইজিংয়ের যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, ‘দুই দেশের অংশীদারিত্বের কোন সীমা নেই’। এরপর থেকে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিলেও মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
চীন কখনোই রুশ আগ্রাসনের প্রতি নিন্দা জানায়নি বা পুতিনকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়নি। ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো মনে করে, মস্কোকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে বেইজিং। তবে চীন এই সংঘাতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবি করে আসছে। নিয়মিত দেশটি উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়ে এসেছে।
তবে একইসঙ্গে চীন এটাও দাবি করেছে যে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের হাতে বারবার অস্ত্র তুলে দিয়ে এই সংঘাতকে বাঁচিয়ে রেখেছে। জিনপিং-পুতিন নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। গত মাসে দুই নেতা ফোনে কথা বলেছেন। শি মন্তব্য করেন, মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের বরফ গলতে দেখে তিনি সন্তুষ্ট।
ইএ/টিকে