লিওনেল মেসির বিদায়ের পর ঘুমিয়ে পড়া বার্সেলোনার ঘুম ভাঙিয়েছেন লামিনে ইয়ামাল। তার তরুণ পায়ের জাদুকরি ফুটবল মনে করিয়ে দিচ্ছে লিওনেল মেসির পায়ের জাদুকে। এই মৌসুমে কাতালান জায়ান্টরা তাই আর্জেন্টাইন মহাতারকার স্মৃতিবিজড়িত ১০ নম্বর জার্সি এই ১৮ বছর বয়সী উইঙ্গারকে দিয়েছে। তবে, ইয়ামাল হয়ত বার্সেলোনার বদলে অন্য কোনো দলের হয়ে পায়ের জাদু দেখাতেন এতোদিনে। তেমনই এক রহস্য সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে।
সম্প্রতি জার্মান পত্রিকা 'বিল্ড' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বার্সেলোনার বিস্ময়বালক ইয়ামালকে দলে ভেড়াতে বায়ার্ন একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক হাসান সালিহামিজিচ এবং টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মার্কো নেপ্পে এমনকি মাদ্রিদে ইয়ামালের সাবেক এজেন্ট ইভান দে লা পেনার সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছিলেন।
বাভারিয়ানরা এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছিল। সে পরিকল্পনায় ছিল ইয়ামালের পরিবারকে জার্মানিতে স্থানান্তর করা, ২০২৩ সালে তার ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা করা এবং প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতিপূরণে তাকে দলে ভিড়ানো। তাদের বিশ্বাস ছিল, ইউরোপের বাকিরা বুঝে ওঠার আগেই এই অনন্য প্রতিভাকে সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে।
কিন্তু শেষ ধাপে এসে সবকিছু ভেস্তে যায়, যখন সুপার এজেন্ট মেন্দেস দৃশ্যপটে আসেন এবং ইয়ামালের প্রতিনিধিত্ব নিজের হাতে নেন। এর ফলে বায়ার্নের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে, বার্সা দ্রুত ইয়ামালকে সিনিয়র দলে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তার ক্যারিয়ারকে দৃঢ়ভাবে কাতালোনিয়ার সঙ্গে বেঁধে ফেলে।
এই ঘটনাই প্রমাণ করে ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তরুণ তারকাকে নিয়ে গল্পটা কতটা ভিন্ন হতে পারত। আজ ইয়ামালকে ২০২৫ ব্যালন ডি’অরের অন্যতম শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরা হচ্ছে, কিন্তু যদি বায়ার্ন আরও জোরালোভাবে চাপ দিত, তাহলে তার ক্যারিয়ার অন্য পথে যেতে পারত।
এটি আরও দেখায়, তরুণ খেলোয়াড় নিয়োগে কতটা দ্রুত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ১৫ বছরের এক কিশোরের জন্য ৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করা তখন ঝুঁকি মনে হলেও, বায়ার্নের সামান্য দ্বিধাই তাদের বড় ক্ষতির কারণ হয়। মাত্র এক বছরের মধ্যেই ইয়ামাল বার্সেলোনার সিনিয়র দলে অভিষেক করেন এবং ২০২৩ সালে তিনি ১ বিলিয়ন ইউরোর অবিশ্বাস্য রিলিজ ক্লজসহ নতুন চুক্তিতে সই করেন, যা কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বীদের আশা পুরোপুরি শেষ করে দেয়।
এর ফলে বার্সেলোনা আরও একবার তাদের লা মাসিয়া একাডেমির মূল্য এবং ইয়ামালের ওপর আস্থা রাখার সুফল বুঝতে পারছে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে খেলার সুযোগ দেওয়াটাই তার সঙ্গে ক্লাবের আবেগী সম্পর্ককে দৃঢ় করেছে।
বায়ার্নের জন্য এটি আরেকটি বেদনাদায়ক 'যদি হতো'র গল্প, যেমন অতীতে আরও কিছু তরুণ প্রতিভা তাদের হাতছাড়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালিহামিজিচের মাদ্রিদ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল গাভিকে লক্ষ্য করা, তবে বায়ার্নের স্কাউটরা ইয়ামালের যুব দলে পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছিলেন। দে লা পেনার সঙ্গে রাতের খাবারে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দুজনকেই চান।
পরিকল্পনাটা ছিল পরিষ্কার— ইয়ামালের পরিবারকে জার্মানিতে নিয়ে আসা, তাকে জার্মান জীবনে মানিয়ে নেওয়া এবং গাভি ও আদাম আজনৌর (যিনি ২০২২ সালে আসলেই বায়ার্নে যোগ দেন) সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা। কিন্তু মেন্দেসের হস্তক্ষেপে সব পাল্টে যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেন্দেস বায়ার্নকে জানিয়েছিলেন, ৫ মিলিয়ন ইউরোতে তার পরিবারকে 'সম্ভবত রাজি করানো যেতে পারে', কিন্তু জার্মান ক্লাবটি তখনও ঝুঁকি নেবে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় ছিল।
এদিকে, বার্সা ইতিমধ্যেই আস্থা দেখাচ্ছিল। মাত্র ১৫ বছর ৯ মাস বয়সে ইয়ামালের সিনিয়র অভিষেক তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে এবং ক্যাম্প ন্যুতে মাঠে নামার সুযোগ বিদেশি ক্লাবগুলির আর্থিক প্রলোভনের চেয়ে অনেক বড় হয়ে ওঠে।
বার্সার এই আস্থার প্রতিদান মিলেছে। ইয়ামাল এখন স্পেনের জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য এবং বিশ্বের ফুটবল বাজারে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত তরুণ প্রতিভাদের একজন। ক্লাবের লক্ষ্য এখন তাকে সুরক্ষিত রাখা এবং মেসি-পরবর্তী যুগে বার্সেলোনার মুখপাত্র হিসেবে গড়ে তোলা।
এবি/টিএ