অপেক্ষাকাল কমছে

সরকারি কর্মচারীদের অবসরে বাড়ছে সুবিধা

অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য পেনশন-সংক্রান্ত নানা জটিলতা নিরসন এবং কল্যাণমূলক সেবা বাড়াতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে পেনশনারদের জীবনযাত্রা আরও সুরক্ষিত হবে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য পেনশন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছরে আনার প্রস্তাব অর্থ বিভাগ জাতীয় বেতন কমিশনে পাঠাবে।

পাশাপাশি পেনশন পুনঃস্থাপনের আগে কেউ মারা গেলে তার স্বামী/স্ত্রী বা যোগ্য উত্তরাধিকারীদের পেনশন সুবিধা প্রদানের বিষয়টিও অর্থ বিভাগকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া পেনশনভোগী অবস্থায় কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করলে, তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী বা স্বামীকে পারিবারিক পেনশন দেওয়ার বিষয়েও সুপারিশ চাওয়া হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেই পুনঃস্থাপন কার্যকর হতো অবসরের ১৫ বছর পর থেকে। এ সময়সীমা এখন কমিয়ে ১০ বছরে আনার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮০ সাল থেকে শতভাগ পেনশন সমর্পণ করে এককালীন সব টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ চালু হয়। এ সুবিধা নিয়ে অনেকেই পেনশনের পুরো অর্থ একসঙ্গে তুলে নিয়ে পারিবারিক খাতে ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে অর্থকষ্টে পড়েন। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে পুনঃস্থাপনের দাবিতে আবেদন করে আসছেন।

সরকার এক সঙ্গে পেনশন উত্তোলনকারীদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা এবং চিকিৎসা ভাতা দিলেও তারা মাসিক পেনশন পেতেন না। এখন তাদের আর্থিক সুরক্ষা বিবেচনায় পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া সহজতর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও চিকিৎসা সুবিধার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত পেনশনাররাও বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন—যা আগে শুধুমাত্র কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল।

অবসরপ্রাপ্ত প্রবাসী সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য পেনশন-সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষরসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বিদেশের বাংলাদেশ মিশন থেকেই সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি করতে অর্থ বিভাগকে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী উৎসব ভাতা দেওয়া হলেও, পেনশন পুনঃস্থাপনের পর সেই ইনক্রিমেন্ট পেনশনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। বিষয়টির সমাধানে অর্থ বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি-সংক্রান্ত কমিটিতে জনপ্রশাসন সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবসহ সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ব্যাপক প্রচারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পেনশন-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এবার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার।

এ সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিরা।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। পেনশন-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সীমানা নির্ধারণে আদালতের রায় মেনে চলবে ইসি Sep 18, 2025
img
বাগেরহাটের চারটি আসন পুনর্বহালে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ঘোষণা Sep 18, 2025
img
সততার জন্য বাংলাদেশি তরুণকে পুরস্কৃত করল দুবাই পুলিশ Sep 18, 2025
img
দুর্নীতি দূর না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন হবে না : বদিউল আলম Sep 18, 2025
img
অ্যানফিল্ডে দর্শক বিতর্কে লাল কার্ড পেলেন কোচ সিমিওনে Sep 18, 2025
img
আমার কাছে মাঝে মধ্যে মনে হয়, সরকার আছে নাকি নেই : রাশেদ খান Sep 18, 2025
img
৭ কলেজ ইস্যুতে ফের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা Sep 18, 2025
img
দেশের মিডিয়া এখনও নিয়ন্ত্রিত : নাহিদ ইসলাম Sep 18, 2025
img
আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল: নাহিদ ইসলাম Sep 18, 2025
img
ইভ্যালির রাসেল ও শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড Sep 18, 2025
img
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১৭৬ বাংলাদেশি Sep 18, 2025
img
ঢাকায় ফ্রান্স চালু করল অত্যাধুনিক ভিসা সেবা কেন্দ্র Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর অচল : নিলোফার মনি Sep 18, 2025
img
চাকসু নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করল ছাত্রদল Sep 18, 2025
img
ফিরেছে নেহাল, স্কোয়াডে নেই আরিফিন Sep 18, 2025
img
সৌদির নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র নয়, প্রধান সঙ্গী এখন পাকিস্তান Sep 18, 2025
img
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের গোপন মিশন : রনি Sep 18, 2025
img
পাকিস্তান-সৌদি চুক্তি নিয়ে ভারতের বার্তা Sep 18, 2025
img
কলকাতার বাজারে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি ইলিশ Sep 18, 2025
img
কথা রাখলেন যোগী আদিত্যনাথ, দিশার বাড়িতে হামলাকারী ২ জন নিহত Sep 18, 2025