জনগণের ওপরে ‘দলীয় এজেন্ডা’ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির দাবি নিয়ে আন্দোলনরত দলগুলোর প্রতি এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তোপথানা রোডে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন-২৫ এর এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয় পর্ব নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট গ্রহণ।
তিনি বলেন, দেশকে একটা অরাজক পরিস্থিতিতে ফেলতে চাচ্ছেন… উদ্দেশ্যটা কী? দেশের মধ্যে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। কিন্তু মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ না। আপনি ইচ্ছা করলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবেন না। যেমন আপনারা (আলোচনা সভায়) এখানে বসে নির্বাচনের জন্য সুন্দর ব্যালট বাক্স নিয়ে এসেছেন, আপনাদের নির্বাচন কমিশন আছে, আপনাদের প্রার্থী আছে, সরাসরি ভোট হবে।
ডা. জাহিদ বলেন, আমি তাদেরও বলি, আসেন জনগণের কাছে যান। জনগণ যাকে গ্রহণ করে, আপনি আপনার এজেন্ডা নিয়ে যাবেন, আমরা আমাদের এজেন্ডা নিয়ে যাব। জনগণ যাকে গ্রহণ করবে সেই এজেন্ডকে আমরা স্যালুট করব। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই জনগণের কথা বলে আপনার দলীয় এজেন্ডা, কোনো দেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা চাপিয়ে দিয়ে মনে করেছেন পার পেয়ে যাবেন, সেটি মানুষ ইনশাল্লাহ হতে দেবে না।
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ বলেন, ৫ আগস্টের আগে অথবা গত ১৬/১৭ বছরে আমরা কেউ সংখ্যানুপাতিক ভোট অর্থাৎ পিআর চাই? আপনারা শুনেন নাই… এই ধরণের বক্তব্য কারো ছিলো না। আজকে কেউ কেউ বলেন… বলতে দোষ নাই। কারণ গণতন্ত্রের মধ্যে কথা বলবেন দিস ইজ দি বিউটি অব ডেমোক্রেসি এবং মত প্রকাশের যে ভিন্নতা থাকবে সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য… এর মধ্যে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু যখন আপনার কথা না শুনলে এটা হতে দেবো না, এটা করতে দেবে না তখন কিন্তু কর্তৃত্ববাদীতার আওয়াজ পাওয়া যায়। অর্থাৎ স্বৈরাচার যে ভাষায় কথা বলতো সেটার প্রতি ধবনি শোনা যায়। এটা কী ঠিক? আপনি ডেমোক্রেসি মানবেন আপনি আপনার নির্বাচনী ম্যানিফোষ্টোতে দেন। আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, যদি জনগণ নির্বাচিত করে আমি আগামীতে এই সিষ্টেমে যাব। যেমন বিএনপি ৩১ দফার কর্মসূচি দিয়েছিলো… বিএনপি নির্বাচিত কী করবে? ইটস ওপেন ডকুমেন্ট… এটা আজকে দেয়নি ২০২২ এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা কর্মসূচি এবং ২০২৩ এর জুলাইতে দিয়েছে ৩১ দফার কর্মসূচি।
তিনি বলেন, যখন নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে… ঐক্যমত্যের আলোচনা চলছে তখন দেখলাম কেউ কেউ রাস্তায় নামছেন, প্রোগ্রাম করতেছেন… দ্যাটস গুড.. প্রোগ্রাম করা ভালো, জনগণকে সচেতন করা ভালো। কিন্তু এর অর্থ এই না যে, আপনি একধরণের কর্তৃত্ববাদীয় মতামত জনগণের নাম বলে জনগণের অনুমতি না নিয়ে চাপিয়ে দেবেন। এটি কোনো অবস্থাতে কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এটি করে আপনারা কী করতে চান? নির্বাচনটাকে আরও প্রলম্বিত করতে চান? নেপাল একটা ছোট দেশ। ইউ নিড টু লার্ণ ফর নেপাল। যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন সেদিন ওইদিনই পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ তারা ঘোষণা করে দিয়েছে। আর আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারের বয়স ১৩ মাস পার হয়ে ১৪ মাসে পড়ল এবং এখনো মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আরও কয়েক মাস বাকি আছে...এটাকে প্রলম্বিত করতে চান।
নির্বাচিত সরকার না থাকায় বৃহৎ আকারে বিনিয়োগ সম্মেলনের পরও বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে না বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিনিয়োগ যদি না হয় আর জব ওপোরচুনিটি ক্রিয়েট না হয় এই বিশাল তুরণ প্রজন্ম কোথায় কাজ করবে? তাদের কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগকারী দরকার।
আর সেই বিনিয়োগকারী দেশীয় হোক, বিদেশী হোক তারা চায় স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক সরকার, জনগণের সমর্থিত নির্বাচিত সরকার… দ্যাট শুড বি আওয়ার টার্গেট…প্রত্যেকের সেটা টার্গেট হওয়া উচিত।
জাহিদ বলেন, মনে রাখতে হবে, কতিপয় লোক দেশের বাইরে গেছে কিন্তু মেজরিটি লোক আপনার সমাজে, আপনার পাশে-পাশে সর্বত্র আছে…যার জন্যই ঝটিকা মিছিল, অমুক মিছিল-তমুক মিছিল দেখেন না আপনারা। এখন আবার নতুন স্টাইল শুরু হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝটিকা মিছিল নাম দেয় কিন্তু ব্যানারটা চেঞ্জ করে... এআইয়ের (আরটিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স) মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, দুই বছর আগের অন্য রাজনৈতিক দলের মিছিলকে ব্যানার বদল করে ঝটিকা মিছিল বলে চালিয়ে দিয়ে জনগণের বিভ্রান্ত করছে।
গতকাল আপনারা দেখেছেন একটা পত্রিকা ফ্যাক্টস ফান্ডিং করে তারা বের করেছে যে, ২০২৩ সালের অমুক মিছিলটা তারা (আওয়ামী লীগ) ঝটিকা মিছিল বলে চালিয়ে দিয়েছে। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তারা এটা করছে।
তিনি বলেন, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জনগণ তাদেরকে দেয় নাই তাদের পক্ষ থেকে এই (পিআর পদ্ধতির ভোট) আন্দোলন। তাদের যে অভিজ্ঞতা এটি কী বলে? যে জিনিসটা আপনি প্র্যাকটিস করতে চাচ্ছেন, সেটা আপনি দেখেন না নেপালে? নেপালে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় বলে গত কয়েক বছরে ১৪ জনের বেশি প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। হোয়েদার দিস ইজ স্ট্যাবল গভর্নমেন্ট। ইজরায়েলকে দেখতে চান? ওয়াট ইজরায়েল ইজ ডিইং? দে আর প্রাকটিসিং পিআর। গণতন্ত্রের সূতিকাগার বৃটেনকে বলে.. সেখানে কীভাবে নির্বাচন হয়। মানুষ ফলো করে ভালো জিনিস… মানুষ কি কখনো খারাপ জিনিস ফলো করে?”
‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন(ফারিয়া)’ এর আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে ও রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী সবুজ ও আরিফুল ইসলাম আরিফের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা ফারিয়ার নেতেরা বক্তব্য রাখেন।
কেএন/টিকে