জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা এবং দৃশ্যমান বিচার কার্যকর করার শর্ত পূরণ হলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো আপত্তি থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ভবনের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এনসিপির রাজশাহী জেলা ও মহানগর সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলেছি যে যদি আমাদের যে জুলাই সনদ সেটি আইনগত ভিত্তি পাই, সেই ভিত্তির মধ্য দিয়ে আমরা আগামীর যে নির্বাচন সেই নির্বাচনের দিকে যাবো এবং আমরা যদি দৃশ্যমান বিচার দেখতে চায়। কারন আপনি আমাদেরকে ১ হাজার মামলার রায় দিতে পারবেন না। আমরা এটা বুঝি। কিন্তু আপনি যদি আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার আসামী যারা খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত, যাদের নির্দেশে এ হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, আপনি যদি ঐ শেখ হাসিনা, কামাল, আরাফাত, পলক, এদের আপনি বিচারের রায় কার্যকর আমার সামনে না দেখাতে পারেন, তাহলে আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে বাংলাদেশে সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু একটা নির্বাচনের দিকে সবাই চলে যাবে। একটা সাধারণ মানুষও তাদের জায়গা থেকে মেনে নিবে না। তাই আমরা অন্তত ঐ গুরুত্বপূর্ণ যে বিচারিক যে রায়গুলো আছে, আমরা সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে আছি, আমরা মনে করি যে, এগুলো যদি সরকার গুছিয়ে নিতে পারে এবং যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তারা যদি এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলে আমাদের মনে হয় যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো বাঁধা থাকার কথা না কিন্তু তার পূর্বে এ শর্তগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকজন উপদেষ্টা নির্বাচনের মাধ্যমে সসম্মানে কিভাবে সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) করা যায়, সেটা চিন্তা করছেন। তারা যেন এই চিন্তা না করে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চুপি চুপি দায়সারাভাবে চলে যাওয়া সম্মানের না। কারন তাদের জুলাই বিপ্লবটাকে ধারন করে জুলাই বিপ্লবটাকে ধারন করে বোল্ডলি একেকটা সংস্কার করার দরকার ছিলো, একেকটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিলো, যেভাবে আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় যে অপকর্মের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলাম, সেগুলোর শেষ দেখতে চেয়েছিলাম সেগুলো যখন আবার সামনে আসে, তখন এই গাফিলতির দায়, তাদেরকে কিন্তু নিতে হবে। আমরা যদি তাদের জায়গা থেকে ঐ রকম স্প্রিটভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে বলেন পলিটিক্যাল ইন্টারেফারেন্সসহ এরকম প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা যদি তাদের বোল্ড সিদ্ধান্ত গুলো পেতাম, তাহলে আমাদের এই অবস্থা দেখতে হতো না।
তিনি আরও বলেন, আমরা হয়তো অভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে বেশকিছু পুলিশ সদস্য কিংবা অন্যান্য বাহিনীর সদস্য যারা জনগনের আইনশৃঙ্খলার সাথে সম্পৃক্ত তাদের থেকে আমরা তুলনামূলক অনেক ক্ষেত্রে ভালো ভালো আচরণ পাচ্ছি। কিন্তু আমরা এমনও দেখছি যে এখনও অনেক পুলিশ আছে, পুলিশের অফিসার আছে, যারা তাদের জায়গা থেকে নতুন করে টাকা ছাড়া কাজ করে না। তাহলে আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। সেক্ষেত্রে আপনি যদি বলেন, এটা আমি জানিনা, আমার তথ্য নেই, প্রমাণ নেই, তাহলে আপনার গোয়েন্দা সংস্থা আছে কেনো? তাহলে আপনি কি কাজ করেন?
তিনি বলেন, আমরা যেটা দেখেছি সবচেয়ে সমস্যা টা হচ্ছে গোড়ায়। কারন অভ্যত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস থেকে শুরু করে প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনীতে, যদি ১ হাজারও কালপ্রিট থেকে থাকতো, যে দলীয় বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে বা আওয়ামী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে, যে মানুষের সাথে অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যদি দৃশ্যমান বিচার হতো, ব্যবস্থা হতো তাহলে এ অবস্থা দেখতে হতো না। তারা প্রথম ফেইল করেছে ঐ আগস্ট -সেপ্টেম্বরে। তারা এই ব্যবস্থাটা নিতে পারে নাই। এখন পর্যন্ত তাদেরকে পেলে-পুষে রেখেছে। তারা এতোদিন চুপ ছিলো, এখন দেখছে যখন কিছুই হচ্ছে না তাই তারা তাদের আগের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই জন্য আমরা মনে করি, আমাদের যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়তো ভাবছেন, এখন তাদের পক্ষে হয়তোবা আবার ঐ বোল্ড হয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা দরকার, ঐটা করাটা সম্ভব নয়, এই জন্য তারা কিভাবে স্ব-সম্মানে এখান থেকে একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে হয়তো এ চিন্তা করছেন। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে যদি নির্বাচন দিয়ে সম্মান বেঁচে যাবে- এ চিন্তা যেনো তারা না করে। কারন এতো বড় একটা অভ্যত্থানের দায়িত্ব, এতো শহীদের রক্তের দায়িত্ব, শুধু একটা নির্বাচন দিয়ে তারা শেষ করে এক্সিট (সমাপ্তি) নিতে চায়, তাহলে আমরা বলি বাংলাদেশের মানুষের কাছে তারা আর কোনোদিন আশ্রয় পাবে না। তাই যেটুকু সময় আছে, আমরা চায় তারা তাদের দায়িত্বটুকু সাহসিকতার সাথে পালন করুক। এভাবে চুপিচুপি ও দয়সাড়া হয়ে চলে যাওয়ার চেয়ে স্ব-সম্মানে যদি একটা দেশের মানুষের জন্য কিছু করে বরং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঐ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটাও সম্মানেরত। আমাদের তাদেরকে আহ্বান করব তারা যেনো অভ্যত্থানটাকে ধারণ করে তাদের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে।
সভায় এনসিপির রাজশাহীর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পিএ/টিকে