রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন ২ হাজার ৪৩৪ শিক্ষার্থী। এখান থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ২ হাজার ৪৯৫ শিক্ষার্থী।
অকৃতকার্য হয়েছেন ৬১ জন। এতে পাশের হার ৯৭ দশমিক ৫৬। গত বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাসের হার ছিল ৯৯ দশমিক শূন্য ৬। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ৯৮৬ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৭৩৭ জন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দেশের সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে প্রকাশ করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বোর্ডের ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারছেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকালেই শিক্ষার্থীদের ফলাফল টাঙিয়ে দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে যে ফলাফল হয়েছে, এতে মেধার মূল্যায়ন ঘটেছে। সরকার চেয়েছে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন হোক। অধ্যক্ষ এ সময় জানান, এ বছর এই প্রতিষ্ঠানের তিন বিভাগ থেকে মোট এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ৫১৪ জন। এরমধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ১৯ জন। অকৃতকার্য হয়েছেন ৬১ জন। এ বছর জিপিএ-৫ এর হার ৩৯ দশমিক ৫২। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ‘স্কুল ওরিয়েন্টেড’। ফলে এখানকার সব শিক্ষার্থী লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ভর্তি হন। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শুধু বাছাই করা শিক্ষার্থীই এখানে পড়েন না।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১ হাজার ৮৫৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৯৭ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৩২২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০৫ জন। মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিল ৩১৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮৪ জন।
বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফলাফল জানতে উপস্থিত হযেছিলেন কয়েক শ শিক্ষার্থী আর তাঁদের অভিভাবকেরা। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তিনি। এই শিক্ষার্থীর বাবা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ের এসএসসির রেজাল্টও এমনই ছিল। ওর সবচেয়ে বড় কোয়ালিটি সে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করে। যত রাত হোক, সে পড়া পরের দিনের জন্য ফেলে রাখে না।’
মাঠজুড়ে ছিল হাসিমুখের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। তাঁরা শিক্ষকদের দেখলে ছুটে যাচ্ছিলেন। ছবি তুলছিলেন। একসঙ্গে জড়ো হয়ে পোজ দিচ্ছিলেন গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে। এই শিক্ষার্থীরা ১২ বছর ধরে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়লেন। এবার তাঁরা ছড়িয়ে যাবেন অন্যান্য জায়গায়। তবে ভালো রেজাল্ট করেও যেসব শিক্ষার্থীই মেডিকেল আর বুয়েটে পড়বেন না, তেমনটা জানা গেল বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সৈয়দা সুমাইয়া আলমের মায়ের সঙ্গে কথা বলে। এই শিক্ষার্থীর মা বর্না চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে মা-বাবার মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে চান। সেভাবেই সামনে আগাবে পড়ালেখা নিয়ে।
তবে ভিকারুননিসার মাঠে এত আনন্দের মধ্যেও দুএকজন শিক্ষার্থীর ম্লান মুখ জানিয়েছে শুধু অকৃতকার্য হওয়া নয়, ভালো ফলের পরও মন খারাপ থাকতে পারে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন নামিরা আজম। এক বছর আগে হারিয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত বাবাকে। বাবা তাঁর ফলাফল দেখে যেতে পারলেন না। এই নিয়ে এত আনন্দের মধ্যেও মন খারাপ করে মা সালমা আক্তারের হাত ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন নামিরা। নমিরা জানালেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু করবেন।
টিজে/এসএন