সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (SIU) ক্যাম্পাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ রাজনীতিকে গোপনে প্রশ্রয় দিচ্ছেন ভিসি আশরাফুল আলম। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসি আশরাফুল আলমকে 'ফ্যাসিবাদের দোসর' আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেছে। শীঘ্রই আন্দোলনের নামার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর আশরাফুল আলম এবং কোষাধ্যক্ষ (ট্রেজারার) প্রফেসর নিতাই চন্দ্র চন্দ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে সহযোগিতা করছেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রশাসনের নীরব সমর্থনেই ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে।
ভিসি প্রফেসর আশরাফুল আলম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং ট্রেজারার প্রফেসর নিতাই চন্দ্র চন্দ সিলেট এমসি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। বর্তমানে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য এবং এসআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক উপদেষ্টা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল দেশ থেকে পালিয়ে গেলে মহানগর বিএনপি নেতা কয়েস লুদীকে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রভাব বিস্তার দেখতে পান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা আল হামরাকে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের মতে, ওই শিক্ষার্থীর নেতৃত্বেই বর্তমানে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক তৎপরতা সংগঠিত হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, গত জুলাই মাসে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফাটল ও ঐক্য বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে পৃথক একটি গ্রুপ গঠন করা হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, ওই গ্রুপের মাধ্যমে আন্দোলন দুর্বল করার চেষ্টা চালানো হয়।
অন্যদিকে, আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান খানকে ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চাপে ভিসি তাকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন।
তবে পরবর্তীতে কোনো দৃশ্যমান তদন্ত বা আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন ছাড়াই তাকে পুনরায় স্বপদে বহাল করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান খান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের ভাতিজাএমন তথ্য ক্যাম্পাসে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং বিতর্ক আরও ঘনীভূত করেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, ভিসি ও ট্রেজারার দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং তারা “ফ্যাসিবাদী রাজনীতির দোসর” হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ভিসি ও ট্রেজারারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ট্রেজারার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।